--- বিজ্ঞাপন ---

রহস্য লুকিয়ে আছে আরব আমিরাতের রাশ আল খাইমার পাহাড়ে

0

কাজী আবুল মনসুর, আরব আমিরাত থেকে ফিরে

দুবাই-আবুদাবির অনেক সৃষ্টি মানুষের। প্রাকৃতিক সৃষ্টির রহস্য লুকিয়ে আছে আরব আমিরাতের রাশ আল খাইমা প্রদেশে। আগে থেকে শুনে আসছিলাম রাশ আল খাইমার ভয় লাগানো পাহাড়ের কথা। তাই শুরু থেকে দেখার ইচ্ছেটা ছিল প্রবল। শারজাহ থেকে রাশ আল খাইমা যেতে সময় লাগে দু’ঘন্টা। প্রায় ২৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। আগে থেকেই রাশ আল খাইমাতে প্রস্তত ছিল দু’ চট্টগ্রামবাসী। তারিক ও নাহিদ। তারা দু’জনে দীর্ঘদিন ধওর রাশ আল খাইমাতে আছেন। দুপুর নাগাদ পৌছে যথারীতি বাংলা খাবার। এখানেও চট্টগ্রামের মানুষ বেশি। অনেকে থাকেন দুরে। শহর থেকে প্রায় পাচঁ থেকে দশ কিলোমিটার দুরে অনেকের বাস। যেহেতু বেশিরভাগই দুরের কারনে নিজস্ব যানবাহন ব্যবহার করেন তাই যাতায়াতে তেমন সমস্যা হয় না। তাছাড়া দুরের বাড়ীগুলোতে ভাড়া অনেকাংশে কম।
আরব আমিরাতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে হলে রাশ আল খাইমার ‘জিবেল জাইস’ এ যেতে হবে। প্রত্মতাত্ত্বিক নিদর্শন তো বটে, এখানে আসলে বুঝা যাবে সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি যে কত বড় হতে পারে তা কিছু নির্দশন। অনেকে বলে থাকেন, রাশ আল খাইমা সৃষ্টিকর্তাও অপূর্ব সৃষ্টি। এখানকার মাটি উর্বর। মাত্র তিন লাখ জনসংখ্যা নিয়ে পর্যটন নগরী রাশ আল খাইমা দাড়িয়ে আছে ওমানের সীমান্তবর্তী এলাকায়। রাশ আল খাইমা স্বতন্ত্র একটি রাষ্ট্র হিসেবে পুরানো দিনের ঐতিহ্য নিয়ে অবস্থান করেছে বহুকাল। ১৯৭২ সালে আরব আমিরাতের ফেডারেশনে যোগ দিয়ে নিজের অস্তিত্বও এদেও সাথে বিলীন করে। তবে রাশ আল খাইমা যাবতীয় সিদ্ধান্ত নিজেরাই নেয় স্বতন্ত্রভাবে। বাংলাদেশিদের ইনভেস্টরভিসার দরজা খোলা এ প্রদেশে। রাশ আল খাইমাতে ঢুকেই মন জুড়িয়ে যায়। পরিচ্ছন্ন একটি শহর। পরিকল্পিতভাবে বহুতলা ভবনের পাশাপাশি চর্তুদিকে সবুজ গাছপালা নজরে পড়ার মতো। প্রতি বছর এখানে বৃষ্টি হয়। ওমানের পাহাড় থেকে পানি বেয়ে নেমে আসে এ অঞ্চলে। তাই এর মাটি উর্বর।


ওাশ আল খাইমার মূল শহর থেকে পাহাড়ের দুরত্ব রয়েছে। সম্ভবত ৫০ কিলোমিটারের মতো। যাত্রা শুরুর প্রাক্কালে নিজের মধ্যে শিহরণ অনুভব করলাম। কারন এই পাহাড়গুলো নাকি ব্যতিক্রম। পাহাড় পর্যন্ত চলার পখ মসৃন। দু’লেইনের রাস্তা। অনেক আরবের ঘরবাড়ি পার হয়ে আমরা পাহাড়ের পথে। যাচ্ছি আর যাচ্ছি। মাঝে দেখলাম বেশ কিছু সিমেন্ট ফ্যাক্টরি। এখানকার পাথর বেশ শক্তিশালি। পাহাড়ের ভেতওে দশ মাইল যেতে হবে। আকাঁ বাকাঁ রাস্তা। যা দেখছি সবই আশ্চর্য মনে হচ্ছে। কোথাও কোথাও মনে হচ্ছে এগুলো বিশাল আকৃতির পিরামিড। আবার কোথাও কোথাও বিশাল খাদ। বিশাল বিশাল পাহাড় একটির সাথে অন্যটি লাগানো। মাঝখানে ভয় লাগানো খাদ।
সাথে থাকা রাশ আল খাইমার অধিবাসি নাহিদ জানালো, ‘এ অঞ্চলের ইতিহাস অনেক পুরানো। প্রায় ১০০০ বছর আগে এখানে মানব সভ্যতা গড়ে উঠেছে। তবে পাহাড়গুলো কিভাবে এখানে সৃষ্টি হয়েছে তার সুনির্দিষ্ট ব্যখ্যা এখনও পাওয়া যায় নি।’ রাশ আল খাইমার ইতিহাসবিদরা মনে করেন, এ অঞ্চলটি ছিল সমুদ্র। এ পাহাড় সমুদ্রের তলদেশেই ছিল। কালের বিবতর্নে এগুলো ভেসে উঠেছে। পানি সরে যাওয়ার পর এগুলো আপন মহিমায় দাড়িয়ে আছে। ঐতিহাসিকভাবে এ এলাকাটির নাম ছিল জুলফার। মোঙ্গলরা এ পাহাড়ের ভেতরে তাদেও আস্তানা গেড়েছিল বলে প্রকাশ। রাশ আল খাইমার দখল বেদখল নিয়ে অতীতের অনেক ইতিহাস রয়েছে।
রাশ আল খাইমার মূল পাহাড়ে ঢুকার পর বুঝলাম আঁকাবাকা রামÍায় অনেক উপরে উঠতে হবে। জানলাম এর উচ্চতা প্রায় সাড়ে ৬ হাজার ফুট। গাড়ীর চালক যদি দকআষ না হয় তাহলে এখানে উঠার দুঃসাহস কেউ দেখাবে না। গাড়ীর শক্তি থাকতে হবে। আমরা যখন উঠছিলাম তখন ধীরে ধীওে তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। শীতকালে তাপমাত্রা থাকে ৫ডিগ্রী সেলসিয়াস। উপওে উঠার পথে পথে পাহাড়ের খাদে কিছু কিছু বাড়ী সদৃশ জায়গা লক্ষ্যনিয়। কারও মতে এখানে রাতে মানুষ থাকে। আবার অনেক পাহাড়ের কোল ঘেষে লাগানো হয়েছে পানি প্রবাহের হাজার হাজার ছোট্ট ছোট্ট নল। এগুলো দিয়ে পানি প্রবাহিত হয় কিনা জানিনা, তবে পাহাড়ের নিচে অনেকদুর তাকানোর পর বুঝা যায় কোন এক সময় এখানে পানির স্রোত ছিল।

পাহাড়গুলোতে কোন গাছপালা নেই। বিশাল বিশাল পাথর খন্ড লক্ষ্যনিয়। পুরোটা পাথরের পাহাড়। মাটির কোন চিহ্ন নেই। মাঝে মাঝে পাহাড়ের দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছিল বিশাল আকারের পিরামিড। এ সব পাহাড়ের ভেতওে কি আছে তা এখনো রহস্যময়। পথ চলতে চলতে নানা সাবধান বাণী সম্বলিত বোর্ড। পাহাড়ে যাতে কেউ কোন কিছু খেয়ে ময়লা ফেলতে না হয় তার জন্য পথে দেয়া হচ্ছে কালো পলিথিন। মাঝে মাঝে রাস্তার রেড লাইনের পাশে অনেক গাড়ীর সারি। মনে হলো, কেউ যদি বিশ্রাম নিতে চায় তাহলে রাস্তার সাইডে দাড়িয়ে কিচুটা সময় কাটাতে পারে। পাহাড়ের উপরে প্রায় ৫ হাজার ফুট উঠার পর পুলিশের বাধাঁ পেলাম। অর্থ আর যাওয়া যাবে না। উপরে যাবেন তারা যারা ‘তারের উপর দিয়ে প্যরাগ্লাইডিং’ করবেন। তারপরও যতদুর উঠেছি তাতে দেখা যাচ্ছে শুধু পাহাড় আর পাহাড়। অনেক নিচের দিকে তাকালে গিরি খাদ। এরই মধ্যে নজওে এলো পাহাড়ের প্রায় ৬ হাজার ফুট থেকে ছোট ছোট কি সব বস্ত ভেসে যাচ্ছে তারের উপর দিয়ে। অনেক পওে বুঝলাম, ওরা পাহাড়ের উপর দিয়ে যাওয়া তারের চেয়াওে বসে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গা ভেসে যাচ্ছে। দেখে অনেকটা গা শিউওে উঠল। অসম্ভব মনোবল আর সাহস না থাকলে যে কারও পক্ষে এটিতে চড়া সম্ভব নয়। পওে জানলাম মাত্র ক’দিন আগে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি মাসেই ভয়ংকর এ পর্বত ভ্রমনটি চালু হয়েছে। পৃথিবীর দীর্ঘতম ‘জীপ লাইন’ বলে এটাকে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এই তারের উপর দিয়ে যাওয়া যাবে প্রায় ৩ হাজার মিটার পর্যন্ত! তাও তারের এ চেয়ারের গতি থাকবে ঘন্টায় ১২০ থেকে ১৫০ কিলোমিটার। রোমাঞ্চকর এ যাত্রা করতে হলে বিপুল টাকা ব্যয় হবে। সম্ভবত বাংলাদেশি ৭ হাজার টাকায় এ ভয়ানক ভ্রমন যাত্রা করা যাবে। অনেক ঝুকি থাকায় খুব একটা কেউ আগ্রহ না দেখালেও প্রতিদিন পর্যটকের সংখ্যা বাড়চে বলে জানালো একজন। রাশ আল খাইমার এ এলাকা ঘিওে পাচঁ তারকা হোটেল, গল্ফ ক্লাবসহ নানা ব্যবস্থার কাজও চলছে। সন্ধ্যা হবার আগেই রাশ আল খাইমার পাহাড় ছেড়ে নিচের দিকে নেমে এলাম। পেছনে ফেলে এলাম রহস্যময় পাহাড়। যাত্রা এবার আল মারজান আইল্যন্ড। যেখানে সূর্য ডোবার দৃশ্যটি চমৎকার।
আল মারজান দ্বীপটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ভরপুর থাকলেও এখানে অনেক কিছু কৃত্রিমভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে। তবে এ দ্বীপটি পারস্য উপসাগওে বাধঁ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে বলে অনেকে জানান। ২০১৮ সালের মধ্যে ৯০ হাজারেরও বেশি বিদেশিরােএ দ্বীপ পরিদর্শন করেন, যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের বড় পছন্দের এ দ্বীপ। ### (চলবে)

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.