কাজী আবুল মনসুর#
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে সম্পর্ক উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। গতকাল,ওভাল অফিসে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে ট্রাম্প প্রকাশ্যে জেলেনস্কিকে ‘স্বৈরশাসক’ বলে সম্বোধন করেন এবং তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন। এই মন্তব্যের পর, উভয় নেতার মধ্যে তীব্র বাগবিতণ্ডা হয়, যা যৌথ সংবাদ সম্মেলন বাতিলের কারণ হয়। এর আগে, ট্রাম্প রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন, যা ইউক্রেনের জন্য উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। জেলেনস্কি এই বিষয়ে মন্তব্য করে বলেন, “ট্রাম্পের প্রথমে পুতিনের সঙ্গে কথা বলাটা আমাদের জন্য সুখকর ছিল না।” তবে, ট্রাম্পের এই অবস্থানের পরেও ইউরোপীয় নেতারা জেলেনস্কির পাশে দাঁড়িয়েছেন। বিশেষ করে, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টার্মার জেলেনস্কিকে ফোন করে তার সমর্থন প্রকাশ করেছেন এবং তাকে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। এই ঘটনাগুলি ট্রাম্প ও জেলেনস্কির মধ্যে সম্পর্কের অবনতির ইঙ্গিত দেয়, যা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে সাম্প্রতিক এই দ্বন্দ্ব মূলত যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন সম্পর্ক, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ট্রাম্পের রাজনৈতিক অবস্থানের পরিবর্তন ঘিরে তৈরি হয়েছে। ট্রাম্প প্রকাশ্যে বলেছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট হলে ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা কমিয়ে দেবেন এবং রাশিয়ার সঙ্গে দ্রুত যুদ্ধ বন্ধের জন্য চুক্তি করতে চাইবেন। তিনি ইউক্রেনের প্রতি বাইডেন প্রশাসনের সমর্থনকে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় বলে উল্লেখ করেছেন। জেলেনস্কি স্পষ্টভাবে আগে থেকে বলেছিলেন, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে ইউক্রেন বিপদে পড়তে পারে,কারণ তার অবস্থান পুতিনের পক্ষে ঝুঁকে যাচ্ছে। ট্রাম্প ও পুতিনের সাম্প্রতিক টেলিফোন কথোপকথনের পর জেলেনস্কি আরও বেশি উদ্বিগ্ন হয়েছেন। ওভাল অফিসে ট্রাম্প এবং জেলেনস্কির বৈঠকের সময় ট্রাম্প সরাসরি তাকে ‘স্বৈরাচারী নেতা’ বলে সম্বোধন করেন। এ নিয়ে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়, এবং যৌথ সংবাদ সম্মেলন বাতিল করা হয়।
বৈঠকের শুরুটা ভাল ভাবেই হয়েছিল। জ়েলেনস্কি, ট্রাম্প একে অপরকে অভিবাদন জানিয়েছিলেন। এর পর সংবাদমাধ্যমের সামনে পূর্বতন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে কটাক্ষ করে ভান্স বলেন, ‘‘চার বছর ধরে আমেরিকার এক জন প্রেসিডেন্ট সংবাদমাধ্যমের সামনে দাঁড়িয়ে ভ্লাদিমির পুতিনকে নিয়ে কড়া কড়া কথা বলে গিয়েছেন। তার পর পুতিন ইউক্রেন আক্রমণ করলেন। দেশের একটা বড় অংশ ধ্বংস করলেন। আসলে শান্তি এবং উন্নয়নের পথ হল কূটনীতির পথ।’’ তিনি বলে চলেন, ‘‘বাইডেনের পথে হেঁটে আমরা দেখেছি। আমরা রাশিয়ার বিরুদ্ধে কড়া কড়া কথা বলে দেখেছি। কাজে কিছু করে দেখাইনি। আসলে আমেরিকা যদি কূটনীতির পথে হাঁটে, তবেই আমেরিকা একটি সুন্দর দেশে পরিণত হতে পারবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সেই চেষ্টাই করে চলেছেন।’’
ভান্সের এই বক্তব্যের পর জ়েলেনস্কি তাঁকে একটি প্রশ্ন করতে চান।
‘অহংকারী বরাহনন্দন থাপ্পড় খেয়েছে ওভাল অফিসে’! জ়েলেনস্কিকে খোঁচা উল্লসিত পুতিনদের
জ়েলেনস্কি: পুতিন আমাদের দেশ আক্রমণ করলেন। বড় অংশ দখল করে নিলেন। ২০১৪ সাল থেকে এটা চলছে। শুধু বাইডেনের কথা বলছি না। ওবামা ছিলেন। তার পর ট্রাম্প ছিলেন, বাইডেন ছিলেন, এখন আবার ট্রাম্প এসেছেন। ২০১৪ সালে কিন্তু কেউ পুতিনকে আটকাননি। উনি বিনা বাধায় আমাদের দেশ দখল করেছেন। মানুষ মেরেছেন।
জ়েলেনস্কি: ২০২২ পর্যন্ত ছবিটা একই ছিল। আমরা পুতিনের সঙ্গে অনেক কথা বলে দেখেছি। অনেক চুক্তি করে দেখেছি। কিন্তু তার পরেও বার বার উনি যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছেন। আমাদের দেশের মানুষদের মেরেছেন। বন্দিদের ফেরত দেননি। কোনও শর্ত মানেনি। ভান্স, এর পরেও আপনি কোন কূটনীতির কথা বলছেন? এর মানে কী?
ভান্স: আমি সেই কূটনীতির কথাই বলছি, যেটা আপনার দেশে এই ধ্বংসলীলা বন্ধ করবে।
জ়েলেনস্কি: ঠিক। কিন্তু আপনি যদি…
ভান্স: মিস্টার প্রেসিডেন্ট, আপনাকে সম্মান করি। কিন্তু ওভাল অফিসে এসে আমেরিকান সংবাদমাধ্যমের সামনে এই ধরনের কথা বলে আপনি আমাদের অশ্রদ্ধা করছেন। আপনার তো আমাদের প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত!
জ়েলেনস্কি: আপনি যদি কখনও ইউক্রেনে যেতেন এবং সেখানকার মানুষের সমস্যাটা নিজের চোখে দেখতেন, তা হলে এই কথা বলতেন না।
ভান্স: আমি দেখেছি অনেক কিছুই। আমি জানি, আপনি কী ভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে মানুষের সামনে নিজের কথা প্রচার করেন।
ভান্স: আপনার লোকজনকে সেনাবাহিনীতে আনতে সমস্যা ছিল, এটা কি অস্বীকার করতে পারেন? ওভাল অফিসে এসে আপনি সেই দেশের প্রশাসনকেই অপমান করছেন, যারা আপনার দেশতে বাঁচানোর চেষ্টা করছে? এটা কি সম্মানজনক?
জ়েলেনস্কি: যুদ্ধের সময়ে প্রত্যেকটা দেশের নিজের নিজের সমস্যা থাকে। আপনারা কিছু অনুভব করছেন না। তাই সুন্দর সমাধান বলে দিতে পারছেন। ভবিষ্যতে আপনারাও এই জিনিস অনুভব করবেন।
ইউক্রেন প্রেসিডেন্টের এই মন্তব্যে মেজাজ হারান ট্রাম্প।
ট্রাম্প: আমরা কী অনুভব করব না করব, আপনাকে সেটা বলে দিতে হবে না। আমরা একটা সমস্যার সমাধান করতে চাইছি। আমরা কী অনুভব করব, আপনি বলবেন না সেটা।
জ়েলেনস্কি: আমি আপনাদের সেটা বলছি না। আমি তো শুধু উত্তর দেওয়ার…
ট্রাম্প (জ়েলেনস্কিকে থামিয়ে দিয়ে গলার স্বর চড়িয়ে): আমরা কী অনুভব করব, সেটা বলে দেওয়ার মতো জায়গায় আপনি নেই। আমরা খুব ভাল এবং শক্তিশালী হিসাবেই আছি। বরং আপনি নিজে এই মুহূর্তে খুব একটা ভাল জায়গায় নেই। নিজেই নিজেকে সেই জায়গায় নিয়ে গিয়েছেন।
ট্রাম্প: লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন নিয়ে আপনি ছিনিমিনি খেলছেন। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে জুয়া খেলছেন। আমেরিকাকে অপমান করছেন।
ভান্স: আপনি কি এক বারও আমাদের কাউকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন?
জ়েলেনস্কি: অনেক বার।
ভান্স: না, আমি এই বৈঠকের কথা বলছি। আমেরিকা আপনার দেশকে সাহায্যের চেষ্টা করছে। এক বারও এই বৈঠকে আপনি আমেরিকাকে ধন্যবাদ দিয়েছেন?
জ়েলেনস্কি: আপনারা মনে করছে, আপনারা গলা চড়িয়ে কথা বলবেন যুদ্ধ নিয়ে আর…
ট্রাম্প: উনি গলা চড়িয়ে কথা বলছেন না। আপনার দেশ বড় সমস্যার মধ্যে আছে। আপনি অনেক কথা বলে ফেলেছেন। আপনারা এই যুদ্ধে জিততে পারবেন না। আমাদের সাহায্যে আপনি এর মধ্যে থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন। আমাদের অস্ত্র না-পেলে দু’সপ্তাহও টিকত না এই যুদ্ধ।
জ়েলেনস্কি: আমি পুতিনের কাছ থেকেও একই কথা শুনেছিলাম। উনিও বলেছিলেন, যুদ্ধ তিন দিন টিকবে না।
ট্রাম্প: এ ভাবে তো ব্যবসা করা খুব মুশকিল হয়ে পড়ছে। আপনার দেশে মানুষ মরছে। আপনার কাছে পর্যাপ্ত সেনা নেই। আর আপনি বলছেন, আপনি যুদ্ধবিরতি চান না!
ট্রাম্প: আপনার মধ্যে কোনও কৃতজ্ঞতা নেই। এটা খুব একটা ভাল কথা নয়। অনেক হয়েছে।
বলে ৪০ মিনিটের বৈঠকে আচমকা ইতি টানেন, চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়েন ট্রাম্প। পরে সমাজমাধ্যমে তিনি জানিয়েছেন, শান্তি চাইলে জ়েলেনস্কির সঙ্গে আলোচনার রাস্তা এখনও খোলা আছে। নিজের ব্যবহারের জন্য ক্ষমা চাইতে রাজি হননি জ়েলেনস্কি। আমেরিকার সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, তিনি ক্ষমা চাইবেন না। তবে ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্কের মেরামত সম্ভব। আমেরিকার সাহায্যের কথাও তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন।
এখন কি হবে?
ইউক্রেনের প্রতি ট্রাম্পের মনোভাব বদলানো মানে মার্কিন সামরিক সহায়তা কমে যেতে পারে, যা ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে দুর্বলতা তৈরি করবে। ইউরোপীয় নেতারা এখন জেলেনস্কিকে সমর্থন দিচ্ছেন,যাতে তিনি আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে শক্ত অবস্থান ধরে রাখতে পারেন। সাম্প্রতিক ঘটনায় পুতিনের জন্য সুবিধাজনক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে, কারণ যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা ছাড়া ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা দুর্বল হয়ে যাবে। ইউরোপীয় দেশগুলোকে ইউক্রেনকে আরও বেশি সহায়তা দিতে হতে পারে, কারণ যুক্তরাষ্ট্র পিছিয়ে গেলে তাদের দায়িত্ব বাড়বে। এই ঝামেলা এখনো চলছে, এবং ভবিষ্যতে এটি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে।
অবশ্য এই দ্বন্দ্বের পেছনে কিছু গভীর এবং স্পর্শকাতর বিষয় থাকতে পারে, যা সরাসরি জনসাধারণের সামনে আসেনি। কয়েকটি সম্ভাব্য কারণ বিশ্লেষণে দেখা যায়, ট্রাম্পের অতীত অবস্থান এবং পুতিনের প্রতি তার ইতিবাচক মনোভাব দেখে অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, তিনি গোপনে রাশিয়ার সঙ্গে কিছু সমঝোতায় যেতে পারেন। যেমন: ইউক্রেনকে কিছু এলাকা (যেমন দোনবাস বা ক্রিমিয়া) ছেড়ে দিয়ে যুদ্ধ বন্ধের চেষ্টা করা। নেটোর সম্প্রসারণ বন্ধ করা, যাতে রাশিয়া আরও হুমকি অনুভব না করে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা, যাতে রাশিয়ার অর্থনীতি স্বাভাবিক হতে পারে। এটি হলে ইউক্রেন সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, কারণ তারা দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমা সহায়তার ওপর নির্ভরশীল।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অতীতে ‘রাশিয়াগেট’ (RussiaGate) কেলেঙ্কারি নিয়ে তদন্ত হয়েছিল, যেখানে অভিযোগ ছিল ২০১৬ সালের নির্বাচনে রাশিয়া তাকে সাহায্য করেছিল। তার ব্যবসায়িক সম্পর্ক এবং রাজনৈতিক ক্যারিয়ার নিয়ে অনেক বিশ্লেষক সন্দেহ করছেন, তিনি আবারও রাশিয়ার কাছ থেকে কোনো সুবিধা পাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। পুতিন যদি ট্রাম্পকে গোপনে কোনো সমর্থন দেয়,তাহলে তিনি ক্ষমতায় ফিরে আসার পর রাশিয়ার প্রতি নরম নীতি নিতে পারেন। ট্রাম্প অতীতেও ইউক্রেনকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছেন। ২০১৯ সালে, তিনি ‘ইউক্রেনগেট’ কেলেঙ্কারিতে জড়িয়েছিলেন, যেখানে অভিযোগ ছিল তিনি জেলেনস্কির ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিলেন বাইডেনের ছেলের (হান্টার বাইডেন) দুর্নীতির তদন্ত করতে। এটি তাকে ইমপিচমেন্টের (অভিশংসন) মুখে ফেলেছিল। ট্রাম্পের বর্তমান অবস্থান শুধু তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নয়, বরং এটি মার্কিন রাজনীতির ভেতরের শক্তিশালী লবি গ্রুপগুলোর প্রভাবের ফলও হতে পারে। কিছু রিপাবলিকান নেতা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রকে ইউক্রেনের যুদ্ধ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। কিছু ব্যবসায়ী ও সামরিক শিল্পপতিরা চাইছেন যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হোক,যাতে অস্ত্র বিক্রির বাজার চালু থাকে। অপরদিকে,কিছু বড় ব্যবসায়ী রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক করতে চায়, যাতে নিষেধাজ্ঞা শিথিল হলে তাদের লাভ হয়।
তবে ধারণা করা হচ্ছে, এটি কেবল একটি ষড়যন্ত্র তত্ত্ব, তবে অনেক বিশ্লেষক বলছেন,পুতিনের কাছে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত বা ব্যবসায়িক কোনো গোপন তথ্য থাকতে পারে। ২০১৭ সালে প্রকাশিত একটি গোপন ডোজিয়ারে (Steele Dossier) দাবি করা হয়েছিল, রাশিয়ার কাছে ট্রাম্পের কিছু ব্যক্তিগত ভিডিও ও তথ্য আছে, যা তাকে ব্ল্যাকমেইল করার জন্য ব্যবহার করা হতে পারে। ট্রাম্প যদি রাশিয়ার প্রতি নরম থাকেন,তাহলে এটি বোঝা যাবে তিনি হয়তো কোনো চাপে আছেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাম্প্রতিক বিরোধের পর ইউরোপীয় নেতারা প্রকাশ্যে ভলোদিমির জেলেনস্কির প্রতি তাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ইউক্রেনের জনগণের মর্যাদা ও স্বাধীনতার জন্য চলমান সংগ্রামের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস ইউক্রেনের প্রতি অবিচল সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন। ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি পশ্চিমা ঐক্যের ওপর জোর দিয়ে যৌথ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য একটি শীর্ষ সম্মেলনের প্রস্তাব দিয়েছেন। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লেয়েন এবং ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট আন্তোনিও কোস্টা উভয়েই জেলেনস্কির সাহসিকতার প্রশংসা করেছেন। তবে,হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবান ট্রাম্পের অবস্থানকে সমর্থন করেছেন, যা ইউরোপীয় নেতাদের মধ্যে মতপার্থক্যকে নির্দেশ করে।
ইউরোপীয় নেতাদের একটি বড় অংশ জেলেনস্কির পাশে রয়েছেন, বিশেষ করে ট্রাম্পের সঙ্গে বিরোধের পর। তবে, কিছু নেতার ভিন্নমতও রয়েছে, যা ইউক্রেন সংকট নিয়ে ইউরোপের অভ্যন্তরীণ জটিলতা প্রদর্শন করে। যদি যুক্তরাষ্ট্র পিছু হটে,তাহলে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষার জন্য ইউরোপীয় দেশগুলোকেই বেশি দায়িত্ব নিতে হবে। ট্রাম্প বলেছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট হলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যুদ্ধ বন্ধের উপায় খুঁজে বের করবেন। তবে অনেকেই মনে করছেন, তার ‘শান্তি চুক্তি’ মানে ইউক্রেনকে কিছু এলাকা রাশিয়াকে ছেড়ে দিতে বাধ্য করা। জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য চাইছে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হোক,যাতে রাশিয়ার শক্তি কমে যায়। তবে তাদের অর্থনৈতিক চাপও বাড়ছে। ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে ঐক্য থাকলেও কিছু দেশ (যেমন হাঙ্গেরি) রাশিয়ার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখতে চাইছে। ইউক্রেনকে যদি যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে দেয়,তাহলে ইউরোপের দেশগুলো কতোদিন একা যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারবে, তা নিয়েও সন্দেহ আছে।
এদিকে রাশিয়ার আক্রমণ ক্রমশ শক্তিশালী হচ্ছে। ২০২৪ সালে রাশিয়া নতুন করে হামলা বাড়িয়েছে, বিশেষ করে পূর্বাঞ্চলীয় শহরগুলোতে। বর্তমানে ইউক্রেনের সৈন্যসংখ্যা ও সামরিক সরঞ্জামের ঘাটতি আছে। মার্কিন সহায়তা না থাকলে,তাদের জন্য যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া কঠিন হবে। জেলেনস্কি নতুন করে সৈন্য নিয়োগের চেষ্টা করছেন,কিন্তু যুদ্ধের কারণে অনেক তরুণ ইউক্রেন ছেড়ে গেছে। পুতিন যদি ইউক্রেনের দুর্বলতা বুঝতে পারেন, তবে তিনি কিয়েভ বা বড় শহরগুলোর ওপর আরও হামলা চালাতে পারেন। যদি পশ্চিমা সমর্থন কমে যায়, তবে রাশিয়া হয়তো পুরো দোনবাস দখল করার চেষ্টা করবে। পুতিন চাইবেন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করতে,যাতে পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনের প্রতি আগ্রহ হারায়।##সূত্রঃ আনন্দবাজার/রয়টার, ছবিঃ এএফপি
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.