মিয়ানমারে শক্তিশালী দুটি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। প্রথম ভূমিকম্পটি স্থানীয় সময় সকাল ১১টা ৫০ মিনিটে ঘটে, যার মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৭.৭। এর উৎপত্তিস্থল ছিল মান্দালয় শহর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে, ভূপৃষ্ঠের মাত্র ১০ কিলোমিটার গভীরে। দ্বিতীয় ভূমিকম্পটি ১২টা ২ মিনিটে অনুভূত হয়, যার মাত্রা ছিল ৭.০। ভূমিকম্পের তীব্রতা এতটাই ছিল যে, থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককসহ আশেপাশের এলাকাগুলোতেও কম্পন অনুভূত হয়েছে। এছাড়া, ভারতের কলকাতা, দিল্লি এবং উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকাতেও কম্পনের প্রভাব পড়েছে। ভূমিকম্পের ফলে মিয়ানমারের বিভিন্ন স্থানে সেতু ও ভবন ধসে পড়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। তবে, হতাহতের সঠিক সংখ্যা এখনও জানা যায়নি। উদ্ধারকাজ চলছে এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। মিয়ানমার ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত। ইউরেশীয় ও ইন্দো-অস্ট্রেলীয় টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষের ফলে এ ধরনের ভূমিকম্প ঘটে থাকে।
ভূমিকম্পের প্রভাব থাইল্যান্ডের বিভিন্ন অঞ্চলে অনুভূত হয়েছে, বিশেষ করে রাজধানী ব্যাংককে। সেখানে উচ্চ ভবনগুলো কেঁপে ওঠে এবং আতঙ্কিত মানুষজন রাস্তায় বেরিয়ে আসে। ব্যাংককের চাতুচাক এলাকায় একটি নির্মাণাধীন ভবন ধসে পড়েছে, এবং কিছু মেট্রো ও হালকা রেল পরিষেবা স্থগিত করা হয়েছে। উত্তরাঞ্চলীয় পর্যটন শহর চিয়াং মাইতেও কম্পন অনুভূত হয়েছে, যেখানে বাসিন্দারা দ্রুত ভবন থেকে বেরিয়ে আসেন। ভূমিকম্পের ফলে সুইমিং পুলের পানি উপচে পড়ার ঘটনাও ঘটেছে। থাই প্রধানমন্ত্রী পেতাংতার্ন সিনাওয়াত্রা এই পরিস্থিতিতে “জরুরি বৈঠক” আহ্বান করেছেন এবং তার দক্ষিণাঞ্চলীয় দ্বীপ ফুকেটের সরকারি সফর স্থগিত করেছেন।
ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার জানায়, পর পর দু’বার জোরালো ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল ভারতের পড়শি দেশ মায়ানমার। রিখটার স্কেলে প্রথমটির কম্পনের মাত্রা ৭.৫ এবং দ্বিতীয়টির মাত্রা ৭ বলে জানিয়েছে ভারতের ভূকম্প পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ন্যাশনাল সেন্টার ফর সিসমোলজি। তবে আমেরিকার ভূতত্ত্ব পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ইউএস জিয়োলজিক্যাল সার্ভে জানিয়েছে প্রথম ভূমিকম্পটির মাত্রা ৭.৭। দ্বিতীয়টির ৬.৪। কম্পন অনুভূত হয়েছে দিল্লি-সহ উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ অংশে। মৃদু কম্পন টের পাওয়া গিয়েছে কলকাতাতেও।
ন্যাশনাল সেন্টার ফর সিসমোলজি জানিয়েছে, প্রথম কম্পনটি হয় ভারতীয় সময় সকাল ১১টা ৫০ মিনিটে। আর দ্বিতীয় কম্পনটি হয় ১২টা ২ মিনিটে। প্রথমটির উৎসকেন্দ্র মায়ানমারের বর্মা প্রদেশের ১২ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। আর দ্বিতীয়টির উৎসকেন্দ্র মায়ানমারের লকসকের ১৫১ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত। দু’টি কম্পনের ক্ষেত্রেই উৎপত্তিস্থলটি ছিল মাটির ১০ কিলোমিটার নীচে।
কম্পন এতটাই তীব্র ছিল যে, ৯০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত তাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাঙ্ককেও হোটেল, শপিং মল কাঁপতে শুরু করে। সেখানে ভেঙে পড়ে একটি নির্মীয়মাণ বাড়ি। আতঙ্কে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে আসেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
তবে ভূমিকম্পের জেরে মায়ানমারে কতটা কী ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, কারও প্রাণহানি হয়েছে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। এখনও পর্যন্ত কোনও সুনামি সতর্কতা জারি হয়নি। তবে উত্তর তাইল্যান্ডে ট্রেন এবং মেট্রো পরিষেবা আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। জরুরি বৈঠকে বসেছেন সে দেশের প্রধানমন্ত্রী।
চারধাম যাত্রা শুরু ৩০ এপ্রিল, ভিডিয়ো রিল এবং ভিআইপি দর্শন নিয়ে কী পদক্ষেপ কর্তৃপক্ষের
গৃহযুদ্ধে দীর্ণ মায়ানমারে কোথায় কী ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, প্রশাসনিক সূত্রে এখনও তা জানা যায়নি। একাধিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, সাগাইং এলাকায় ইরাবতী নদীর উপর পুরনো একটি সেতু ভেঙে পড়েছে। সাগাইং থেকে ২৪ কিলোমিটার দূরে মান্দালয়ে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে কয়েক জন আটকে পড়েছেন বলে প্রাথমিক ভাবে খবর পাওয়া গিয়েছে।
অবশ্য ভূমিকম্প মায়ানমারে নতুন নয়। ১৯৩০ থেকে ১৯৫৬ সালের মধ্যে সে দেশে সাত বা তার বেশি মাত্রার ছ’টি ভূমিকম্প হয়েছিল। মায়ানমারের উত্তর থেকে দক্ষিণে বিস্তৃত রয়েছে সাগাইং চ্যুতিরেখা। প্রায়ই ভূআন্দোলনের কারণে ভূমিকম্প এই ভারতের এই পড়শি দেশে।##ছবি/রয়টার্স
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.