-- বিজ্ঞাপন ---

বাংলাদেশের জন্য অন্তপ্রাণ কে এই লিওনিদ ব্রেজনেভ!

সিরাজুর রহমান,বিশেষ প্রতিনিধি#

গত ১০ই নভেম্বর ছিল সাবেক সভিয়েত ইউনিয়ন এর সম্মানিত প্রেসিডেন্ট লিওনিদ ব্রেজনেভের ৪২ তম মৃত্যু বার্ষিকী। মূলত ১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে একনিষ্ঠ সমর্থক ও সহায়তাকারী ছিলেন তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের অত্যন্ত প্রভাবশালী প্রেসিডেন্ট লিওনিদ ব্রেজনেভ। তিনি ১৯শে ডিসেম্বর ১৯০৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৮২ সালের ১০ই নভেম্বর মারা যান।

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর পক্ষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জড়িয়ে পরার প্রবল আশঙ্কা সৃষ্টি হওয়ায় দ্রুত বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে প্রয়োজন ছিলো ভারতের পাশাপাশি আরেক বিশ্বশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়নের পূর্ণ সমর্থন এবং বৈশ্বিক সহায়তার। বিশেষ করে ১৯৭১ সালে ইন্দিরা গান্ধীর স্বাক্ষরিত সোভিয়েত-ভারত মৈত্রী চুক্তি বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে দারুণ একটি সুযোগ এনে দেয়।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তৎকালীন বিশ্বের এক নম্বর সুপার পাওয়ার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের পক্ষে জাতিসংঘে যুদ্ধ বিরতির পক্ষে অবস্থান শুরু করলে প্রেসিডেন্ট লিওনিদ ব্রেজনেভ এর নেতৃত্বে পরাক্রমশালী সোভিয়েত ইউনিয়ন সরাসরি বাংলাদেশের নির্যাতিত ও অসহায় বাঙালিদের সমর্থন জানিয়ে আমেরিকার বিপক্ষে শক্ত অবস্থান নেয়। ফলে আমেরিকা এই যুদ্ধে সরাসরি জড়িয়ে পড়ার সাহস দেখাতে পারেনি।

প্রথমত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে সামরিক সহায়তার অংশ হিসেবে বঙ্গপোসাগরে সপ্তম নৌবহর পাঠানোর মতো ভয়ঙ্কর চক্রান্ত করলে সোভিয়েত ইউনিয়ন পাল্টা সামরিক পদক্ষেপ গ্রহনের হুমকি দেয়। তাছাড়া প্রেসিডেন্ট লিওনিদ ব্রেজনেভের নির্দেশে জাতিসংঘে পাকিস্তানের পক্ষে আনিত আমেরিকার যুদ্ধ বিরতির সকল প্রস্তাবে ভেটো দেয়।

অন্যদিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন বৈশ্বিক পর্যায়ে পাকিস্তান ও আমেরিকার বিরুদ্ধে সফল কূটনীতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পথ সুগম করে দেয়। বিশেষ করে ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের ৪,৫ ও ১৩ তারিখে পাকিস্তানের পক্ষে মার্কিন নিক্সন সরকার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব আনলে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেটো প্রদান করলে তা সরাসরি বাতিল হয়ে যায়।

১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসে মাত্র নয়দিনের ব্যবধানে আমেরিকার আনীত তিন তিনবার পাকিস্তানের পক্ষে যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব বাতিল হয়ে যায় সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেটোর কারণে। ঐ সময় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব পাশ হলে মহান মুক্তিযুদ্ধে আমাদের চূড়ান্ত বিজয় হয়ত এতো দ্রুত অর্জন করা সম্ভব হতো না।

তার পাশাপাশি ১৯৭১ সালের ১২ই ডিসেম্বর নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ব্রেজনেভের নির্দেশে আমেরিকাকে কৌশলগতভাবে মোকাবিলা করার লক্ষ্যে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের নৌবাহিনী বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে ভারত মহাসাগরে সরাসরি ১২ থেকে ১৫টি যুদ্ধজাহাজের একটি বহর মোতায়েন করে। যার মধ্যে গাইডেড মিসাইল এবং পরমাণু মিসাইলবাহী সাবমেরিনও অন্তভূক্ত ছিল।

রুশ মহানায়ক লিওনিদ ব্রেজনেভ এর নেতৃত্বে সোভিয়েত ইউনিয়নের সামরিক পদক্ষেপের শক্ত হুশিয়ারি ও জাতিসংঘে সরাসরি ভেটো প্রদান বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার অর্জনের পথকে অনেকটাই সহজ করে দেয়। আর এক্ষেত্রে যে মহান মানুষটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন, তিনি হলেন সেই তৎকালীন বিশ্ব পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট লিওনিদ ব্রেজনেভ। কোল্ড ওয়ার যুগে তার দীর্ঘ ১৮ বছরের একটানা শাসনামলে সারা বিশ্বে সোভিয়েত ইউনিয়ন মার্কিন জোটের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক প্রভাব বিস্তার নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পায়। এখনও বাংলাদেশের অনেক মানুষ স্মরণ করেন লিউনিদ ব্রেজনেভকে।##

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.