মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম, (০৪ অক্টোবর, ২০১৯ ইং) : পাকিস্তান সীমান্তে ঘন ঘন সামরিক মহড়া চালাচ্ছে ভারত। এসব মহড়ার পাশাপাশি পাকিস্তানে পুনরায় হামলা চালাবে এমর্মে ভারতের কয়েক দফা হুমকিকে নতুন করে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ার ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন সামরিক ও কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। জাতিসংঘে গত ২৭ সেপ্টেম্বর কাশ্মীর নিয়ে তার ভাষণে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান পরমাণু যুদ্ধের ইঙ্গিত দেয়ার পর থেকে উত্তেজনা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে।
সর্বশেষ গত এক সপ্তাহে বেশ কয়েকবার ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, সেনা ও বিমান বাহিনী প্রধানগণ কঠোর ভাষায় পাকিস্তানে হামলা চালানোর হুমকি দিয়েছেন। এসব হুমকি, সীমান্তে ঘন ঘন সামরিক মহড়া চালানোতে দেশ দুটি গত ফ্রেব্রুয়ারীর বালাকোটের মত সীমিত কিংবা এক ভয়াবহ পরমাণু যুদ্ধের মুখোমুখি হতে চলেছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী ভারতের শহর গুজরাটের কাচ্চে ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর স্পেশাল অপারেশনস ডিভিশনের কমান্ডোরা ব্যাপক সামরিক মহড়া চালায়। এতে সেদেশের তিন বাহিনীর স্পেশাল সার্ভিসের কমান্ডোরা সন্ত্রাস বিরোধী নানা কলাকৌশল পরখ করে দেখে । এবং ভবিষ্যতে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের মত যে কোন অভিযানের প্রস্তুতিও সম্পন্ন করেছে । একজন মেজর জেনারেলের নেতৃত্বে ওই মহড়ার নাম দেয়া হয় ‘ স্মেলিং ফিল্ড’। ভারতের বার্তা সংস্থা এএনআই জানিয়েছে, ওই স্পেশাল অপারেশনস ডিভিশনের দায়িত্বে রয়েছেন মেজর জেনারেল অশোক ধিঙ্গরা।
এরও আগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর কাশ্মীরের লাদাখের উচ্চ ভূমিতে অপর একটি বৃহৎ সামরিক মহড়ার আয়োজন করে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ১৪ তম ‘ ফায়ার এন্ড ফিউরি’ কোরের সৈন্যরা। উত্তরাঞ্চলের সামরিক কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল রনবীর সিং মহড়াটি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন।
এদিকে ভারতের পত্র পত্রিকা সামরিক সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, গত ২ অক্টোবর থেকে সন্ত্রাসবিরোধী আরও একটি সামরিক মহড়া ‘কাজিন্দ-২০১৯ শুরু করেছে ভারত। আর এটি কাজাখাস্তানের সেনাদের সাথে চলবে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত। ভারতের উত্তরখন্ডের পৃত্থোরাগড়ে এই যৌথ সন্ত্রাস বিরোধী মহড়া চলছে।
কাশ্মীরকে ঘিরে দুদেশ যখন মুখোমুখি এসময় এক রিপোর্টে পরমাণু বিজ্ঞানীরা আশংকা প্রকাশ করে বলেছেন, এমুহূর্তে ভারত-পাক পরমাণু যুদ্ধ হলে দু দেশের সাড়ে ১২ কোটি মানুষের মৃত্যু হবে। সায়েন্স অ্যাডভান্স নামে একটি জার্নালে আমেরিকার রুটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়-নিউ বার্নসউইকের সহ-লেখক অ্যালান রোবক বলেছেন, ‘যেখানে বোমা টার্গেট করা হবে শুধু সেই জায়গাই নয়, এ ধরনের যুদ্ধে ভয় রয়েছে গোটা বিশ্বের।’
এতে আরও বলা হয়েছে , যদি যুদ্ধ হয়, সেক্ষেত্রে শুধু ভারত ও পাকিস্তানই নয়, গোটা বিশ্বে যুদ্ধে প্রভাব পড়বে। আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে কোনও একসময়ে এই দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ লেগে যেতে পারে। পাকিস্তান আক্রমনকারী ভারতীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রথমে পরমাণু বোমার সর্বশক্তি ব্যবহার করবে বলে এতে আশংকা করা হয়েছে।
ওই গবেষণার লেখক রুটগার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অ্যালান রোবক আরও জানিয়েছেন, গোটা বিশ্বে মোট নয়টি দেশ পরমাণু শক্তিধর। তাদের মধ্যে ভারত ও পাকিস্তান এমন দুটি দেশ, যারা খুব দ্রুত গতিতে নিজেদের পরমাণু শক্তির বৃদ্ধি ঘটাচ্ছে।
এদিকে মার্কিন প্রভাবশালী দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকার ২ অক্টোবর সম্পাদকীয়তে ভারতের মোদী সরকারের বিরুদ্ধে কাশ্মীরে নিপীড়নের অভিযোগ এনে তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে কাশ্মীরে কার্ফু তুলে নেয়াসহ মানুষের মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়ারও আহ্বান জানানো হয় সম্পাদকীয়তে । ##