--- বিজ্ঞাপন ---

ফ্রান্স প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবিতে রণক্ষেত্র ফ্রান্স

প্রস্তাবিত নয়া নিরাপত্তা আইনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হাজার হাজার মানুষ

0

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবিতে অশান্ত এখন ফ্রান্স। চলমান বিক্ষোভে রণক্ষেত্রে পরিনত হয়েছে অনেক এলাকা। হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমেছে বিক্ষোভ করতে। প্রস্তাবিত নয়া নিরাপত্তা আইন এবং প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁর বিরুদ্ধে প্যারিস-সহ দেশের বেশ কয়েকটি শহরের রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখান হাজার-হাজার মানুষ। রাজধানী প্যারিসে চলমান বিক্ষোভ থামাতে পুলিশ দফায় দফায় মারমূখি হয়ে উঠে।  ইটবৃষ্টি, দোকান ভাঙচুর, জ্বলল গাড়ি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের নজরে আসে। পরিস্থিতি সামাল দিতে লাঠিচার্জের পাশাপাশি কাঁদানে গ্যাসের শেলও ফাটাল পুলিশ। দিনের শেষে দেশ জুড়ে গ্রেফতার হয়েছে শতাধিক বিক্ষোভকারী।  অর্ধশত পুলিশ আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত আইনের ২৪ নম্বর অনুচ্ছেদে পুলিশ অফিসারের ছবি প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা আনার কথা বলা হয়েছে। এই অনুচ্ছেদই বাতিলের দাবিতে চলছে বিক্ষোভ। তাঁদের দাবি, পুলিশকে শনাক্ত করা সম্ভব না-হলে পুলিশি নির্যাতনের ঘটনা আরও বাড়বে। পুলিশের জন্য আরও ভাল প্রশিক্ষণ কিংবা নীতি আনার বদলে এ ভাবে নাগরিক অধিকার ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে বলেও দাবি আন্দোলনকারীদের।

এ আইন যাতে পাস না হয় তার জন্য প্যারিসের রাস্তায় নামে হাজার হাজার প্রতিবাদী। গোড়ায় প্রতিবাদ শান্তিপূর্ণই ছিল। পুলিশ তাঁদের আটকাতে গেলে কালো পোশাক পরা এবং মুখ-ঢাকা এক দল বিক্ষোভকারী পুলিশের উপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ। কিছু সংবাদমাধ্যমের অবশ্য দাবি, পুলিশই প্রথমে বলপ্রয়োগ করে।তবে বিষয়টা শুধুই আইন ঘিরে প্রতিবাদ, নাকি মাকরঁই আসল নিশানায়— ভাবাচ্ছে বিশেষজ্ঞদের। সমীক্ষা বলছে, এই মুহূর্তে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আছে মাত্র ৩৮ শতাংশ মানুষের সমর্থন। কূটনীতিকেরা আশঙ্কা করছেন, বছর তিনেক আগে যে-ডানপন্থীদের রুখতে দেশের বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল একমত হয়ে মাকরঁকে ক্ষমতায় এনেছিল, সেই ডানপন্থীরাই না ২০২২-এর ভোটে ক্ষমতাচ্যুত করে মাকরঁকে! প্রশাসন যদিও বলছে, গত সপ্তাহের থেকে প্রায় অর্ধেক কমেছে বিক্ষোভকারীর সংখ্যা।

একদল বিক্ষোভকারী একটি সুপার মার্কেট, অফিস ও ব্যাংকে ভাংচুর চালালে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে পাল্টা জবাব দেয়। এতে পরিস্থিতি সহিংস আকার ধারণ করে। যে বিলটি নিয়ে এত বিতর্ক তার ২৪ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘শারীরিক কিংবা মানসিকভাবে’ ক্ষতিগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে দায়িত্ব পালনরত কোনো পুলিশ সদস্যের ছবি প্রকাশ করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ বলে গণ্য হবে। এতে আরও বলা হয়, এ ধরনের অপরাধের প্রমাণ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সর্বাধিক এক বছরের কারাদণ্ড এবং ৫৪ হাজার মার্কিন ডলার জরিমানা করা হবে।

বিলটির সমর্থকরা বলছেন, এটি পাস হলে তা পুলিশকে হয়রানি এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নাজেহাল করা থেকে সুরক্ষা দেবে। কিন্তু সমালোচকেরা বলছেন, পুলিশের কর্মকাণ্ডের ছবি তোলা বা ভিডিও ধারণ করতে না দিলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং নাগরিক অধিকার লঙ্ঘিত হবে, কেননা ফ্রান্সের পুলিশের বিরুদ্ধে বর্ণবাদের অভিযোগ রয়েছে।

প্রস্তাবিত আইনটি নিয়ে সমালোচনা মুখে পড়ে ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর ক্ষমতাসীন দল গত সপ্তাহে জানায়, আইনটির কিছু অংশ নতুন করে লেখা হবে। তবে এতেও বিরোধীরা শান্ত হয়নি। প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর জনপ্রিয়তা কমে যাওয়ার পর তিনি ইসলাম ও মুসলিমদের সমালোচনায় মেতে উঠেন বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে। (ছবিঃ এএফপি)

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.