--- বিজ্ঞাপন ---

আজারবাইজান-আর্মেনিয়া যুদ্ধঃ ভারী অস্ত্রের বিরুদ্ধে নতুন প্রযুক্তির সূচনা

0

২০২০ সালের নার্গানো-কারাবাখ যুদ্ধ ছিল মুলত প্রচলিত ভারি অস্ত্রের বিরুদ্ধে একেবারে সম্পূর্ণ নতুন প্রযুক্তি এবং ধারণার যুদ্ধ ব্যবস্থাপনা এবং সমর কৌশলের সূচনা মাত্র। আর্মেনিয়া-আজারবাইজান যুদ্ধে তুরস্কের তৈরি কমব্যাট ড্রোন, ইলেক্ট্রনিক্স ওয়ারফার সিস্টেম, রাডার জ্যামারের মতো নতুন কৌশল ও উচ্চ মাত্রার প্রযুক্তির ব্যাপক সফল ব্যবহার যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ার তৈরি অত্যন্ত ভারি অস্ত্রে সজ্জিত আর্মেনিয়ার সামরিক বাহিনীর পরাজয় মাত্র ৪৪ দিনের মধ্যেই সুনিশ্চিত করে দেয়। আর এই যুদ্ধের সমর কৌশল এবং নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সমর বিশেষজ্ঞ এবং প্রযুক্তিবিদদের নতুনভাবে চিন্তা করতে বাধ্য করেছে।

বিশেষ করে ২০০১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের প্রথম কোন দেশ হিসেবে যুদ্ধক্ষেত্রে কমব্যাট ড্রোনের ব্যবহার শুরু করে। এখানে প্রকাশ থাকে যে মার্কিন ড্রোনগূলো আফগানিস্থান, পাকিস্তান, ইরাক কিংবা সিরিয়ায় জঙ্গি ও সন্ত্রাসী দমনে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করে গেলেও কিন্তু আজ অব্ধি অতি মাত্রায় সক্রিয় কোন যুদ্ধে এবং শত্রু পক্ষের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের বিপক্ষে সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার সুযোগ পায়নি।

তুরস্কের নিজস্ব প্রযুক্তির কম্পোজিট ম্যাটারিয়ালের তৈরি বায়রাক্তার টিবি-২ কমব্যাট ড্রোন (ইউএভি) অনেকটাই স্টিলথ প্রযুক্তি হওয়ায় এবং নিজস্ব ইলেক্ট্রনিক্স ওয়ারফার কোরাল জ্যামার সিস্টেম ব্যবহার করে আর্মেনিয়ায় এক্টিভ অবস্থায় মোতায়েন থাকা রাশিয়ার এস-৩০০, পান্তাসির-এস১, বাক-এম১, কেইউবি, ৯কে৩৩ ওসা এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ব্যাপকভাবে ধ্বংস করতে সক্ষম হয়। তাছাড়া নার্গানো-কারাবাখ যুদ্ধে মোতায়েন থাকা রাশিয়ার টি-৭২ মেইন ব্যাটল ট্যাংক এবং আর্টিলারী ইউনিট এবং সাজোয়া বহর একের পর এক অবলীলায় ধ্বংস হতে থাকে ইসরাইলের কামিকাজী সুসাইডাল ড্রোন এবং তুরস্কের টিবি-২ কমব্যাট ড্রোনের ভয়াবহ মিসাইল হামলায়।

আবার যুদ্ধক্ষেত্রে আর্মেনিয়ার রাডার সিস্টেম পুরো মাত্রায় এক্টিভ থাকা সত্ত্বেও তা কোন অবস্থাতেই আকাশে তুরস্কের টিবি-২ ড্রোনের অবস্থান ও উপস্থিতি সনাক্ত করতে পারেনি শুধুমাত্র তুর্কী কোরাল জ্যামার সিস্টেম এক্টিভ থাকার কারণে। আবার ইউএভি অপারেটদের দক্ষ পরিচালনা এবং কৌশলের মুখে কোন ভাবেই টিকতে পারেনি আর্মেনিয়ার সামরিক বাহিনী এবং তার এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম। শেষমেশ পরাজয় সুনিশ্চিত জেনেও আর্মেনিয়ার সামরিক বাহিনী নির্বিচারে আজারবাইজানের বেশকিছু শহরের উপর সেই সত্তরের দশকের সভিয়েত ইউনিয়নের তৈরি স্কাড মিসাইল হামলা চালিয়ে শতাধিক নিরীহ মানুষ হত্যা করে। তাছাড়া দেশটির সরকার প্রধান আজারবাইজানে ট্যাক্টিক্যাল ইস্কেন্দার মিসাইল হামলা চালানোর হুমকী দিলেও বিষয়টিকে আজারবাইজান এবং তুরস্ক আমলে নেয়নি কিংবা যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সরেও আসেনি।

এখানে প্রকাশ থাকে যে, আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজান যুদ্ধ আর মাত্র এক মাস চালু থাকলে আর্মেনিয়াকে নিশ্চিতভাবে তার মূল ভূখণ্ডের একটি বড় অংশ হয়ত হারাতে হতো। যা নিয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ থাকে না। এদিকে আবার সিরিয়া, লিবিয়া এবং আজারবাইজানে তুরস্কের ড্রোনের সফল ব্যবহার এবং নতুন প্রযুক্তির সমর কৌশলে ভীত হয়ে নিজেকে বাঁচাতে গ্রিস ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে যুদ্ধবিমান এবং সামরিক সাজ সরঞ্জাম ক্রয় করতে উঠে পড়ে লেগেছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে ফ্রান্স থেকে পুরনো হলেও ১৮টি রাফাল এডভান্স জেট ফাইটার ক্রয়ের চুক্তি সম্পন্ন করেছে দেশটি। তাছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের দুই প্রভাবশালী দেশ সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত তুরস্কের সাথে সকল বিরোধ মিটিয়ে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

যা হোক তুরস্কের ড্রোন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বায়কার মাকিনা সাম্প্রতিক সময়ে স্বল্প খরচের বায়রাক্তার টিবি-২ ড্রোনের আরো আপগ্রেডেড ভার্সন টিবি-৩ এবং অধিক অস্ত্র বহণে সক্ষম আকেন্সি সার্ভিসে আনতে যাচ্ছে আগামী ২০২২-২৩ সালের মধ্যে। তাছাড়া তুর্কী এ্যারোস্পেস ইণ্ডাস্ট্রিজ (টিআইএ) তাদের নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি আকসঙ্গুর নামে অত্যাধুনিক হেভী কমব্যাট ড্রোনের বেশকিছু সফল পরীক্ষামুলক উড্ডয়ন সম্পন্ন করেছে। যা আগামী ২০২৩ সালের মধ্যেই তুর্কী সামরিক বাহিনীর হাতে চলে আসবে। তাই বর্তমানে তুরস্কের বিমান বাহিনীতে মাত্র ২৪৫টি এফ-১৬ এবং ৪৮টি এফ-৪ ফ্যান্টম বিমান থাকায় ইউরোপের বেশকিছু দেশ তুরস্কের বিমান বাহিনীকে একেবারে শক্তিহীন বলে উপহাস করলেও সাম্প্রতিক সময়ে তুর্কী সামরিক বাহিনীতে অতি উচ্চ প্রযুক্তির কমব্যাট এণ্ড নন-কমব্যাট ড্রোন, কোরাল জ্যামার সিস্টেম এবং ইলেক্ট্রনিক্স ওয়ারফার সিস্টেম চলে আসায় এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়ন অব্যাহত থাকায় তুরস্কের শত্রু ভাবাপন্ন দেশের জন্য একটি বড় ধরণের চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিতে পারে।

এখনে কার্যত তুরস্ক তার আকাশ সক্ষমতা এবং সামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলার জন্য অত্যন্ত ব্যয়বহুল জেট ফাইটারের পিছনে অর্থ ব্যয় না করে তার চেয়ে অনেক অল্প খরচে আরো অত্যাধুনিক এবং নিজস্ব উচ্চ প্রযুক্তির কমব্যাট এণ্ড নন-কমব্যাট ড্রোন, ইলেক্ট্রনিক্স ওয়ারফার সিস্টেম, এবং স্বল্প ও মধ্যম পাল্লার ক্রুজ ও ব্যালেস্টক মিসাইল সিস্টেম তৈরি কিংবা সার্ভিসে আনার ভবিষ্যত কৌশল নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বলে প্রতিয়মান হয়। আর মার্কিন যুক্তরাষ্টের সরাসরি বিপক্ষে গিয়ে সর্বশেষে রাশিয়া থেকে এস-৪০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ক্রয় করার মূল উদ্দেশ্য হলো কিন্তু এখান থেকে ভবিষ্যতে যতটা সম্ভব প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করা।

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.