--- বিজ্ঞাপন ---

নিজের জীবনের গল্প শুনালেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী

চট্টগ্রামের তরুন ব্যবসায়ীদের সংগঠন জুনিয়র চেম্বারের চেইন হ্যান্ডওভার

0

স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন,‘আমাদের দেশের তরুণরা স্বপ্ন দেখছে। সেই স্বপ্ন পূরণে নেতৃত্ব সৃষ্টি করছে। উন্নত জাতির বুনিয়াদ আছে, অতীত আছে। আমাদের তরুণদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। নিজেকে ভালোবাসলে মানুষকে, প্রতিবেশীকে ভালোবাসতো হবে। আমি মনে করি না দুর্নীতি, অন্যায়, অপরাধ না করলে আমরা টিকে থাকব না। আমার বাবাকে প্রথম উপার্জনের টাকা দেওয়ার সময় বলেছিলেন, তোমার টাকায় সন্দেহ থাকলে আমাকে দিও না। সেই থেকে এখনো আমি অসৎ পথে রোজগার করিনি।’

শুক্রবার রাতে নগরের হোটেল রেডিসন ব্লু’র মোহনা হলে জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল (জেসিআই) চট্টগ্রাম কসমোপলিটন আয়োজিত ‘চেইন হ্যান্ডওভার সিরোমনি’অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন,’আমি মনে করি না যে মানুষটি আজকে সফল হয়নি তার মধ্যে সফল না হওয়ার মত কোন কারণ আছে। জাস্ট ইউ হ্যাভ টু কিপ দ্যা রেস, ইউ হ্যাভ টু ডিটারমিনেশন এন্ড ইউ হ্যাভ টু গো এ হেড। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হবে। সংকল্প থাকতে হবে এবং এগিয়ে যেতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছেন। একসময় সাবমেরিন কেবল বিনামূল্যে বসাতে পারতাম, বিএনপি বলল নিরাপত্তার জন্য হুমকি হবে। এখন ডিজিটাল দেশ হওয়ায় মানুষের আয় বেড়ে গেছে। আমাদের মেয়েরা এখন রাত ১০-১১টায়ও বাসে উঠে লাইন ধরে। মাগো চারটা ভাত দেন- এখন শুনি না। বাংলাদেশ অসম্ভব সম্ভাবনার দেশ। শেখ হাসিনার কারণে আমাদের মানুষ সম্পদে পরিণত হয়েছে। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ চলে গেছে, সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হয়ে গেছে। চট্টগ্রামে ২টি ফলের দোকান ছিল। এখন গ্রামেও টিভি ফ্রিজের দোকান আছে। বিদেশি বিনিয়োগে অনেক কারখানা হবে। আমাদের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ কারখানা গড়তে হবে। দারিদ্র্য খুঁজে পাওয়া যাবে না। মাথাপিছু আয়সহ বিভিন্ন সূচকের উন্নতির কথা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, আমাদের মেয়েরা এখন রাত ১০-১১টায়ও বাসে উঠে লাইন ধরে। মাগো চারটা ভাত দেন- এখন শুনি না। বাংলাদেশ অসম্ভব সম্ভাবনার দেশ। শেখ হাসিনার কারণে আমাদের মানুষ সম্পদে পরিণত হয়েছে। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ চলে গেছে, সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হয়ে গেছে।আমি মনে করি না দুর্নীতি, অন্যায়, অপরাধ না করলে আমরা টিকে থাকব না।

মন্ত্রী বলেন, আমি সাধারণ পরিবার থেকে বড় হয়েছি। অনেকবার সংসদ সদস্য হয়েছি। সংসদ সদস্য হিসেবে মানুষের জন্য করেছি। এখন বড় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে। সরকারের সবচেয়ে বড় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেও সততার সাথে কাজ করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, সফলতা ও সততার পেছনে অণুপ্রেরণা পেয়েছি পিতার আদর্শ থেকে।
মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ধনী পরিবারের সন্তান নই। পারিবারিকভাবে তেমন কোন কোনো ধন-সম্পদ পাইনি। তবে আমি গরীব মানুষ নই। আমার বাবা অত্যন্ত আল্লাহওয়ালা মানুষ ছিলেন। বাবা-মা গ্রামে থাকতেন, গ্রামে আমার জন্ম হয়েছে। আমি যখন স্কুলে পড়ছি, তিনি অবসর নিয়েছেন। কৃষি আয়ের উপর নির্ভরশীল ছিল আমার পরিবার। সংসার কোনমতে চলতো কৃষির আয় দিয়ে।’ তিনি বলেন, আমার প্রথম রোজগার ছিল ১০০ টাকা। বাবার হাতে এ টাকা তুলে দেয়ার পর তিনি খুশি হলেন। কিন্ত একটু পরে মুখটা কালো করে বললেন, বাবা তোমরা বড় হয়েছো, রোজগার করবা, তোমার এ টাকার উপর কোন সন্দেহ থাকলে আমাকে দিও না। আমার জমি-জমা যা আছে তার কিছু অংশ বিক্রি করে খেয়ে গেলেও আমার বাকি জীবন চলে যাবে। আমি সারাজীবন ভালো ও সৎ রোজগারের উপর নির্ভরশীল ছিলাম। বাকি জীবন আমি কোন প্রকার অসৎ রোজগার থেকে মুক্ত থাকতে চাই।
তাজুল ইসলাম বলেন, ‘তখন বাবা ছাড়া আমার আর কেউ নেই যে টাকা দিতে হবে। শুধু বাবাকে দেয়ার জন্য আমার টাকা রোজগার করা। বাবার প্রতি আমার সর্বোচ্চ ইমোশন ও শ্রদ্ধা কাজ করতো। ১০ টাকাও যদি রোজগার করতে পারি সেটা বাবাকে দিতে পারলে তিনি খুশি হবেন-এটা আমার কাছে ছিল আবেগের বিষয়। আর এই টাকাটা যদি অসৎ পথে রোজগার হয় তাহলে বাবাকে দিলে তিনি মনে কষ্ট পাবেন। কারণ তিনি আমাকে নিষেধ করেছেন। মন্ত্রী বলেন, ‘আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম, তখন আমি বিশ্বাস করতাম না যে লেখার মধ্যে কোনো মিথ্যা থাকতে পারে। বলার মধ্যে মিথ্যা থাকতে পারে- এটা আমি বিশ্বাস করতাম। বিশ্বাস করতাম যে কথার মধ্যে মিথ্যা বলে মানুষ। কিন্তু মিথ্যা কথা লেখে এটা কিন্তু তখন পর্যন্ত আমি বিশ্বাস করতাম না, আমি তখন এতটা বোকা ছিলাম। সে সময় বাবা সৎ পথে রোজগার নিয়ে যে কথাগুলো বলেছেন সেগুলো আমি মেনে চলার চেষ্টা করে আসছি সত্যিকার অর্থে। আমি জানি না এটা আপনারা বিশ্বাস করবেন কিনা, কিন্তু এটা সত্য। সিরিয়াসলি আমি চেষ্টা করে আসছি। যতটুকু সততার সাথে টাকা রোজগার করার সুযোগ ছিল, শতভাগ পারা যায়নি আমাদের সমাজের কারণে। কিন্তু এক ইঞ্চিও এদিক সেদিক হইনি যতটুকু পারা গেছে।’ মন্ত্রী বলেন, ‘এখন আমি মন্ত্রী, এখানে অনেক সুযোগ আছে। বিলিয়ন, মিলিয়ন টাকা অবৈধ পথে আয়ের সুযোগ আছে। কিন্তু আমি এখনো চেষ্টা করি নিজেকে সব জিনিস থেকে স্বচ্ছ রাখতে। এখন আমি মোটামুটি ধনী মানুষ। আমার কাছে এত টাকা নেই, কিছু টাকা যা আছে আমার জন্য যথেষ্ট, চলবে। আমি আমার বাবার কথাটা কেন বললাম, আমি মাঝে মাঝে বলি, খুব সৎভাবে বলি, আমি যদি পেরে থাকি, কেন এটা হবে না? আমি জ্যাক মা’র কথা বলি, আমি বেজোসের কথা বলি, তারা যখন বলে আমি দুই হাজার ডলারের চাকরির জন্য গিয়েছিলাম, আমাকে দেইনি। বেজোস তো চাকরি-বাকরি না পেয়ে তার বাবা-মায়ের কাছ থেকে ৯ হাজার ডলার নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছে। জ্যাক মা’ও তো কোনরকম কিছু টাকা সংগ্রহ করে ব্যবসা শুরু করেছে। অর্থ্যাৎ এটা মনে করি না, দুর্নীতি না করলে, অন্যায় না করলে, অপরাধ না করলে আমরা টিকে থাকবো না।’

অনুষ্ঠানে কি-নোট স্পিকার (মুখবন্ধ) হিসেবে উপস্থিত থেকে জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের সভাপতি নিয়াজ মোর্শেদ এলিট বলেন, ‘আজ থেকে আট বছর আগে আমরা এ জুনিয়র চেম্বার প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি বলে আজ আমরা এতোগুলো ইয়াং লিডার পেয়েছি। এ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আমরা নানা সহযোগিতা দিয়েও শিখেছি কিভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে হয়, কিভাবে মাউথপিসের সামনে কথা বলতে হয়। এ জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনালের কারণে আমি নিজেকে গড়তে পেরেছি।’

অনুষ্ঠানে মন্ত্রী তাজুল ইসলাম ও মেয়র এম রেজাউল করিমকে জেসিআই’র পক্ষ থেকে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন নতুন কমিটির সভাপতি মো. টিপু সুলতান শিকদার। অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনারের বক্তব্যে জেসিআই’র তরুণ উদ্যেক্তাদের উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী। জেসিআই চট্টগ্রাম কসমোপলিটনের সভাপতি টিপু সুলতান সিকদারের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন জেসিআই বাংলাদেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাহমুদ উন নবী প্রিন্স ও চট্টগ্রামের সদ্য বিদায়ী সভাপতি শহীদুল মোস্তাফা চৌধুরী মিজান। অনুষ্ঠানে জেসিআই চট্টগ্রাম কসমোপলিটনের সাবেক সভাপতি রইসুল উদ্দিন সৈকত, জসিম আহমেদ, মো. গিয়াস উদ্দিন, মাশফিক আহমেদ রুশাদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন বিদায়ী ও নতুন সভাপতি। জেসিআই চট্টগ্রাম কসমোপলিটনের বিদায়ী সভাপতি শহীদুল মোস্তফা চৌধুরী মিজান চেইন হস্তান্তর করেন জেসিআই চট্টগ্রাম কসমোপলিটনের নবনির্বাচিত সভাপতি মো. টিপু সুলতান সিকদারকে।

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.