--- বিজ্ঞাপন ---

একটি দেশের জন্য মুদ্রাস্ফীতি আসলে কতটা বিপদজনক হতে পারে

ভেনিজুয়েলার বাজারে ১ কেজি মুরগির মাংসের দাম ২২ লাখ বিলিভার!!

0

একটি দেশের জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং স্থিতিশীলতার জন্য নিয়ন্ত্রণহীন মুদ্রাস্ফীতি আসলে কতটা বিপদজনক হতে পারে তার জ্বলন্ত উদাহরণ হলো আফ্রিকার দেশ জিম্বাবুই। জিম্বাবুয়ের অদক্ষ সরকারের ভ্রান্ত আর্থিক নীতি এবং ব্যাপক দূর্নীতির ফলে ভয়াবহ মাত্রায় অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পড়ে দেশটি। জিম্বাবুয়ের দেশীয় টাকার মানের এতটাই অবমূল্যায়ন করা হয় যে দেশটির সরকার এক রকম বাধ্য হয়েই ১,০০০ বিলিয়ন (১ট্রিলিয়ন) মূল্য মানের জিম্বাবুয়ান ডলারের মুদ্রা নোট ছাপিয়েছিল দেশের অর্থনীতিকে রক্ষা করার জন্য। অবশ্য বর্তমানে সেই মুদ্রা বাতিল করা হয়েছে। ২০২১ সালের হিসেব অনুযায়ী জিম্বাবুয়ের জিডিপি ২১ বিলিয়ন ডলার এবং মুদ্রাস্ফিতির হার ৩২০%। তাছাড়া ২০২১ সালের ৫ই মে দেশটির মুদ্রা মান এক ডলারের বিপরীতে ৩৬১.৯ জিম্বাবুয়ান ডলার নির্ধারণ করা হয়।

এদিকে আবার মার্কিন বিরোধী শিবির খ্যাত বিপ্লবী নেতা হুগো শ্যাভেজের দেশ ভেনিজুয়েলার ঠিক একই ভয়াবহ মুদ্রাস্ফীতি অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে এক মার্কিন ডলারের বিপরীতে প্রায় ২,৩৫,০০০ বলিভার নির্ধারণ করা হয়েছে এবং মুদ্রাস্ফিতির হার প্রায় ৩,৩৩২%। এখানে বলিভার হলো ভেনিজুয়েলার জাতীয় মুদ্রার মান। ২০২০ সালের হিসেব অনুযায়ী ভেনিজুয়েলার নমিনাল জিডিপি ৪২.৫৩ বিলিয়ন ডলার, জিডিপি বৃদ্ধির হার -১২% এবং বেকারত্বের হার প্রায় ৪৫%।

বর্তমানে ভেনিজুয়েলার বাজারে এক কেজি মুরগির মাংস ক্রয় করতে দেশটির সাধারণ জনগণকে প্রায় ২২ লক্ষ বিলিভার এবং এক কেজি আটা কিনতে প্রায় ১৫ লক্ষ বলিভার কিংবা এক হালি ডিমের জন্য ১.২০ লক্ষ বলিভার ব্যয় করতে হচ্ছে। আবার ভেনিজুয়েলায় কোন গৃহযুদ্ধ না চলা সত্ত্বেও বর্তমানে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শরণার্থী এবং বাস্তুহারা লোকের বসবাস এখন ভেনিজুয়েলায়। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার হিসেব মতে, ভয়াবহ অর্থনৈতিক এবং খাদ্য সংকটের মুখে যুদ্ধ কবলিত দেশ সিরিয়ার পর বিশ্বের সর্বোচ্চ সংখ্যক প্রায় ৩৭ লক্ষ ভেনিজুয়েলার নাগরিক পার্শ্ববর্তী কোন দেশের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন।

তাছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম প্রভাবশালী দেশ ইরানের অবস্থাও অনেকটা একই রকম বলা চলে। মুলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা দেশগুলোর দীর্ঘ মেয়াদী অর্থনৈতিক অবরোধ এবং বানিজ্যিক নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানের জাতীয় তেল শিল্প ও রপ্তানি মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ২০২০ সালের সমাপ্ত বছরে ইরানের নমিনাল জিডিপি ৬৮২.৮ বিলিয়ন ডলার এবং মাথাপিছু আয় ৮,০০০ মার্কিন ডলার দেখানো হলেও বার্ষিক জিডিপি বৃদ্ধির হার (মাইনাস) -৬.০০% এবং দেশটির মূল্যস্ম্ফীতির হার প্রায় ৩৫% এসে ঠেকে। এদিকে দেশটির গড় বেকারত্বের হার প্রায় ১৮% (২০২১)।

তাছাড়া ৭ই মে, ২০২১ এর হিসেব অনুযায়ী এক ডলারের বিপরীতে প্রায় ৪২,১০৫ ইরানী রিয়াল গুনতে হচ্ছে দেশটির সাধারণ জনগণকে। যা কিনা আমাদের দেশের টাকার হিসেবে ১.০০ টাকার বিপরীতে ৪৯০ ইরানি রিয়াল হতে। অর্থ্যাৎ এ মুহুর্তে ইরানে মাত্র ১০০ ডলার নিয়ে কেউ ভ্রমনে গেলে তিনি ৪২ লক্ষ ইরানী রিয়ালের সমপরিমাণ অর্থ ব্যয় করার সুযোগ পেয়ে যাবেন। তাই বর্তমানে ইরানের বিপ্লবী সরকার দেশের সার্বিক মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং বাজারে অর্থ প্রবাহ ঠিক রাখতে ৫,০০০, ১০,০০০, ২০,০০০, ৫০,০০০, ১,০০,০০০ এবং ৫,০০,০০০ মূল্য মানের ইরানী রিয়াল ব্যাংক নোট ছাড়া হয়েছে। অথচ ইরানে এখন আগের ৫, ১০, ২০, ৫০ কিংবা ১০০ ও ৫০০ রিয়াল মানের মুদ্রানোট আদৌ ব্যবহার হয় কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.