--- বিজ্ঞাপন ---

দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৬ বিলিয়ন ডলার

0

দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে। শক্তিশালী হচ্ছে দেশের অর্থনীতি। সরকারের সময়োপযোগি পরিকল্পনা ও বিভিন্ন পদক্ষেপ এক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে বিগত চার দশক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এই প্রথম বারের মতো সর্বোচ্চ ৪৬ বিলিয়ন ডলারের সীমাকে স্পর্শ করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের দেয়া এক তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২১ সালের ২৯শে জুন বাংলদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৪৬.০৮২ বিলিয়ন ডলার বা ৩ লক্ষ ৯১ হাজার কোটি টাকা। যেখানে চলতি ২০২১ সালের ৩রা মে বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৪৫.১০ বিলিয়ন ডলার বা ৩ লক্ষ ৮৩ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা।
আসলে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মহামন্দা এবং করোনা মহামারির মধ্যেও অবিশ্বাস্যভাবে প্রতিনিয়ত রেকর্ড পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আসছে। বিশেষ করে বিদেশে থাকা সম্মানিত প্রবাসী কর্মীদের পাঠানো রেমিট্যন্সের উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল এবং শক্তিশালী অবস্থানে উঠে এসেছে। যার ধারাবাহিকতায় চলতি ২০২১ সালের ২৯শে জুনের দিন শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ইতিহাসে এই প্রথম বারের মতো ৪৬.০৮২ বিলিয়ন ডলারের পৌঁছে যায়। যেখানে ১ জুন তারিখে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৪৫.৫৪ বিলিয়ন ডলার।
তাছাড়া বাংলাদেশের এই বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে কমপক্ষে আগামী ১৪ থেকে ১৬ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে। যেখানে কিনা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে তাদের চাহিদা মাফিক অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার মজুত থাকতে হয়।
গত ২০২০-২১ অর্থ বছরের ডিসেম্বর মাসের শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৪৩.১৭ বিলিয়ন ডলার এবং ২০১৯-২০ অর্থ বছরের ৩০শে জুন মাসে ছিল ৩৬.০৩৭ বিলিয়ন ডলার এবং ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের ৩০শে জুন মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩২.৭২ বিলিয়ন ডলার।
বর্তমান সরকার ২০১৯-২০ অর্থ বছরের জুলাই মাস থেকে প্রবাসী কর্মীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের উপর ২% হারে আর্থিক প্রণোদনা দেবার ব্যবস্থা করেন। অর্থাৎ বর্তমানে বিদেশে থাকা কোন প্রবাসী কর্মী বাংলাদেশে ১ লক্ষ টাকার সমপরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠালে তার সাথে আমাদের সরকারের তরফ থেকে ২ হাজার টাকা আর্থিক প্রণোদানা হিসেবে তার ব্যাংক একাউন্টে যোগ করে দেয়া হয়। তাছাড়া দেশের বিভিন্ন ব্যাংক এবং আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান সরকারের এই প্রণোদনার সাথে আরো ১% হারে তাদের বাড়তি প্রণোদনা দেবার অফার দিয়েছে। এতে করে আমাদের দেশের বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী কর্মীরা তাদের রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত হচ্ছেন এবং প্রবাসী কর্মীরা তাদের হাতে থাকা আগের গচ্ছিত টাকাও বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছেন এই বাড়তি লাভের আশায়।
২০২০-২১ অর্থ বছরের ১১ মাসে প্রবাসী কর্মীরা দেশে ২২.৮৪ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছে। যেখানে ২০১৯-২০ অর্থ বছরের ১২ মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৮.২১ বিলিয়ন ডলার। সাম্প্রিক সময়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশের বৈদেশিক রপ্তানির পরিমাণও ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২০ সালের দিকে করোনা মহামারির কারণে দেশের রপ্তানি আয় অনেকটা কমে গেলেও ২০২১ সালের শুরু থেকে দেশের রপ্তানি বৃদ্ধির হার ও প্রবণতায় ইতিবাচক ধারা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তাছাড়া বর্তমানে দেশের আমদানি ব্যয় কিছুটা কমে আসায় এবং দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও জাইকার মতো আন্তর্জাতিক ঋণ সহায়তা এবং অনুদানের কারণে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার বৃদ্ধি পেয়ে এখন একটি স্থিতিশীল ও শক্ত অবস্থানে চলে এসেছে।
এদিকে ২০২১ সালের ৪ই জুন ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৬০৫.০০৮ বিলিয়ন ডলার এবং চলতি বছরের ১১ই জুন পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ২৩.৫৯ বিলিয়ন ডলার। যদিও পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের প্রায় ৬০% পর্যন্ত বিশ্বব্যাংক এবং আইএমএফ কিংবা চীনের মতো কিছু দেশের কাছ থেকে নেয়া বৈদেশিক ঋন ও দেনার উপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে আছে। এদিকে চলতি ২০২১ সালের মে মাস শেষে শ্রীলংকার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস পেয়ে মাত্র ৪.০২ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। যদিও আমাদের সম্মানিত হাসিনা সরকার বন্ধুভাবাপন্ন দেশ শ্রীলংকাকে আর্থিক সহায়তা এবং বৈদেশিক ব্যালেন্স অব পেমেন্ট সক্ষমতা ধরে রাখতে ২০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ সহজ শর্তে প্রদান করতে যাচ্ছে বা ইতোমধ্যেই করে দিয়েছে।
বর্তমানে বিশ্বের প্রথম সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অর্জনকারী দেশের তালিকায় চীনের নাম সবার উপরে উঠে এসেছে। ২০২১ সালের মে মাসের হিসেব অনুযায়ী রেড জায়ান্ট চীনের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ৩.৩৬২ ট্রিলিয়ন ডলার বা ৩,৩৬২ বিলিয়ন ডলার ছিল। তাছাড়া দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে জাপানে। ২০২১ সালের এপ্রিল মাসের হিসেব অনুযায়ী জাপানের সেন্ট্রাল ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ১.৩৮ ট্রিলিয়ন ডলার বা ১,৩৭৮ বিলিয়ন ডলার। তাছাড়া ১.০৭ ট্রিলিয়ন ডলার বা ১০৭০ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে বিশ্বের সর্বোচ্চ তৃতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে ইউরোপের দেশ সুইজারল্যাণ্ড।#

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.