--- বিজ্ঞাপন ---

কি হচ্ছে আফগানিস্তানে

0

কি হতে যাচ্ছে আফগানিস্তানে। কে হচ্ছেন নতুন প্রেসিডেন্ট। নতুন প্রেসিডেন্ট নাকি সরাসরি ক্ষমতা গ্রহণ। এসব প্রশ্নে উত্তপ্ত রাজনৈতিক বিশ্ব। আফগানিস্তানে তালেবানরা যে ক্ষমতা দখল করবে এটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জানাই ছিল। তবে কোন পদ্ধতিতে ক্ষমতা দখল তা নিয়ে সংশয় রয়েছে সবার মাঝে। এর মধ্যে তালেবান ক্ষমতা গ্রহণের দোরগোড়ায় পৌছে গেছে, বাকি শুধু আনুষ্ঠানিকতা। আফগানিস্তানে প্রথমে রাশিয়া, এরপর যুক্তরাষ্ট্র আর বর্তমানে চীনের সমর্থনে তালেবান ক্ষমতা গ্রহণ করছে বলে। তালেবানের সাথে রয়েছে পাকিস্তানও। অনেক দেশের কূটনীতিকরা এরই মধ্যে আফগানিস্তান ত্যাগ করেছে। ইরান দূতাবাস এখনও খোলা আছে। আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি পদত্যাগ করেছেন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় খবর ছড়িয়ে পড়েছে যে, তিনি এরইমধ্যে দেশ ছেড়ে চলে গেছেন।

আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেছে তালেবান। অনেকটা বিনা রক্তপাতেই তারা রোববার রাতে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে প্রবেশ করেছে। কাতারভিত্তিক নিউজ চ্যানেল আলজাযিরায় রোববার রাতে সরাসরি প্রচারিত ভিডিওতে দেখা গেছে, কাবুলের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের অভ্যন্তরে দরবার হলে সশস্ত্র তালেবান সদস্যরা টহল দিচ্ছে। এর আগে বিকেলেই পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করেন প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি। তিনি তাজিকিস্তানে পৌঁছে দাবি করেন, রক্তপাত এড়াতে তিনি এ পদক্ষেপ নিয়েছেন।কোনো কোনো গণমাধ্যম ভাইস প্রেসিডেন্ট আমরুল্লাহ সালেহরও দেশত্যাগের খবর দিয়েছে।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মাদ জাওয়াদ জারিফ বলেছেন, তার দেশ আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা অব্যাহত রাখবে। নিজের অফিসিয়াল টুইটার পেজে দেয়া এক পোস্টে এ মন্তব্য করেন জারিফ। তিনি বলেন, দখলদারিত্বের মতোই সহিংসতা ও যুদ্ধের মাধ্যমে কখনো আফগান সংকটের সমাধান করা যায়নি এবং ভবিষ্যতেও যাবে না। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যারা আফগানিস্তানে শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য সমন্বয় পরিষদ গঠন করেছেন তারা সত্যিকার অর্থে সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবেন বলে তেহরান আশা করছে।

তালেবান এক বিবৃতিতে ঘোষণা করে, তারা বলপ্রয়োগ করে কাবুলে প্রবেশ করতে চায় না। কিন্তু এর কয়েক ঘণ্টা পর তাদের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়, প্রেসিডেন্ট দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তাদের অবস্থান ত্যাগ করার পর তালেবান সদস্যদের কাবুলে প্রবেশ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।রোববার শেষ বেলায় তালেবান সদস্যরা চারদিক দিয়ে কাবুলে ঢুকে পড়ে। কোনো কোনো গণমাধ্যম বলছে, প্রেসিডেন্ট গনি আফগানিস্তান থেকে তাজিকিস্তানে চলে গেছেন। তবে এ বিষয়ে আফগানিস্তানের সরকারি কর্মকর্তারা কেউ মুখ খুলছেন না। এদিকে, তালেবান গোষ্ঠী কাবুলে ঢুকে পড়েছে বলেও খবর বের হয়েছে।এদিকে, প্রেসিডেন্ট গনি দেশত্যাগ করলেও আফগানিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই, শান্তি বিষয়ক উচ্চ পরিষদের প্রধান ও তালেবানের সঙ্গে আলোচনায় নেতৃত্বদানকারী আফগান সরকারের প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহ ও হেজবে ইসলামির নেতা গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ার কাবুলেই অবস্থান করছেন।

হামিদ কারজাই’র দপ্তর থেকে বলা হয়েছে, বিশৃঙ্খলা ও জনদুর্ভোগ এড়িয়ে শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য একটি সমন্বয় পরিষদ গঠন করা হয়েছে। ওই দপ্তর বলেছে, হামিদ কারজাই, আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহ ও গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ারকে নিয়ে এই পরিষদ গঠিত হয়েছে।

এর আগে আজই রাজধানী কাবুল অবরুদ্ধ করে তালেবান। এই গোষ্ঠীর সদস্যরা কাবুলের প্রবেশদ্বারগুলোতে অপেক্ষা করছে। তালেবান মুখপাত্র সোহাইল শাহিন জানিয়েছেন, শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রত্যাশায় তারা অপেক্ষা করছেন, জোর করে তারা কাবুল দখল করতে চান না। তালেবান আরো দাবি করেছে, লুটপাট ঠেকাতে তারা কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নিতে চায়।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সাঈদ খাতিবজাদে বলেছেন, আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের ইরান দূতাবাস ছাড়া দেশটিতে ইরানের বাকি সব কূটনৈতিক মিশন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তিনি রোববার তেহরানে সাংবাদিকদের বলেন, কাবুলে দূতাবাসের পাশাপাশি মাজার শরিফ, জালালাবাদ, কান্দাহার ও হেরাতে ইরানের কনস্যুলেট রয়েছে। এর মধ্যে মাজার শরিফ, জালালাবাদ ও কান্দাহার শহরের কনস্যুলেটের কার্যক্রম কয়েকদিন আগেই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এসব কনস্যুলেটে বর্তমানে নিরাপত্তা রক্ষী ও স্থানীয় কিছু কর্মী ছাড়া আর কারো উপস্থিতি নেই।
কূটনৈতিক সূত্রগুলোর বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি পদত্যাগ করার পর খুব সম্ভবত সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলী আহমাদ জালালি অস্থায়ী প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।

অন্যদিকে আফগানিস্তানের ভারপ্রাপ্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সাত্তার মিরজাকওয়াল দেশটির রাজধানী কাবুলে রাত্রিকালীন কার্ফিউ জারি করার কথা ঘোষণা করেছেন। তিনি গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংক্ষিপ্ত ভিডিও বার্তায় বলেছেন, নগরীতে চুরি, ডাকাতি ও লুটতরাজ এড়াতে এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এবং রাত ৯টার পর যাকেই রাস্তায় দেখা যাবে তাকে চোর-ডাকাত বলে গণ্য করা হবে।
আফগানিস্তানের উন্নয়ন কাজে সহযোগিতা ও মানবিক ত্রাণ পরিচালনা করায় ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে তালেবান। একইসঙ্গে দেশটিতে সামরিক তৎপরতা চালানোর ক্ষেত্রে নয়াদিল্লিকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছে তারা। তালেবান মুখপাত্র সোহেল শাহিন এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আফগানিস্তানে ভারতীয় সেনা উপস্থিতির পরিণতি ভালো হবে না। ভারতীয়রা আফগানিস্তানে অন্যান্য দেশের সামরিক উপস্থিতির পরিণতি স্বচক্ষে দেখেছেন। একইসঙ্গে শাহিন বলেন, আফগানিস্তানের অবকাঠামো নির্মাণ, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন, পুনর্গঠন ও জনকল্যাণে ভারত যেসব কাজ করেছে সেজন্য আমরা তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। গত দুই দশকে আফগানিস্তানের অবকাঠামো নির্মাণ কাজে কয়েকশ’ কোটি ডলার খরচ করেছে ভারত।

তালেবান ক্ষমতা গ্রহণ করলে বিদেশি কূটনীতিকদের নিরাপত্তা নিয়ে যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে সে সম্পর্কে তালেবান মুখপাত্র বলেন, কূটনীতিকদের ব্যাপারে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার; তাদের কোনো ক্ষতি আমরা করব না।

সাক্ষাৎকারে উগ্র জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে তালেবানের সম্পর্ক থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেন সোহেল শাহিন। তিনি বলেন, ভারতসহ অন্য কোনো দেশে হামলা চালানোর কাজে আফগানিস্তানের ভূমি ব্যবহার করার অনুমতি দেবে না তালেবান।

এদিকে মার্কিন সরকার মনে করছে, তালেবান খুবই অল্প সময়ের মধ্যে রাজধানী কাবুলে হামলা চালাতে পারে। মার্কিন দূতাবাস থেকে কর্মীদের সরিয়ে আনার জন্য পেন্টাগন আফগানিস্তানে নতুন করে তিন হাজার সেনা মোতায়েন করার ঘোষণা দিয়েছে। এর একদিন পর মার্কিন দূতাবাস কর্মীদেরকে স্পর্শকাতর তথ্য, দলিল-দস্তাবেজ ও কম্পিউটার ধ্বংসের নির্দেশ দেয়া হলো। মার্কিন সরকার চাইছে, শুধুমাত্র গুরুত্বপূর্ণ কিছু কূটনীতিক কাবুলে অবস্থান করবেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন গত বৃহস্পতিবার ঘোষণা করেছে যে, কাবুলে দূতাবাস খালি করা হবে এবং সেখানে শুধুমাত্র কোর ডিপ্লোম্যাটরা অবস্থান করবেন। দূতাবাস কর্মীদের সরিয়ে আনার জন্য যে তিন হাজার সেনা মোতায়েন করার ঘোষণা দিয়েছে পেন্টাগন তাদেরকে কাবুলে মোতায়েন করা হবে। অথচ কিছুদিন আগে অনেকটা গোপনে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার করে মার্কিন সরকার। আকস্মিকভাবে মার্কিন সেনাদেরকে প্রত্যাহার করার ফলে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয় তার সুযোগ নিয়েই মূলত তালেবান গোষ্ঠী একের পর এক আফগান শহর দখল করে চলেছে।# পার্স টুডে

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.