--- বিজ্ঞাপন ---

করোনাকালেও বাড়ছে পোশাক রফতানি

0

বাংলাদেশের রপ্তানি বিষয়ক গবেষণামুলক প্রতিষ্ঠান রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের সার্বিক রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে। তাদের প্রকাশিত তথ্যমতে, চলতি ২০২১ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশ থেকে ৩০৭৬ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করা হয়েছে। অবশ্য যার বেশির ভাগ অংশই তৈরি পোশাক। চলতি বছরের মার্চ মাসে রপ্তানি আয় ছিল বিগত ২০২০ সালের মার্চ মাস অপেক্ষা ১২.৫৯ শতাংশ বেশি। যেখানে ২০২০ সালের মার্চ মাসে ২৭৩০ মিলিয়ন ডলারের পন্য সারা বিশ্বে রপ্তানি করা হয়। চলতি ২০২১ সালের মার্চ মাসে রপ্তানি বেশ ভালো হলেও ২০২০-২১ অর্থ বছরের প্রথম নয় মাসে সামগ্রিক রপ্তানি আয় কমে যায় প্রায় ১২ শতাংশ। যা কিনা টাকার অংকে ২৮.৯৪ বিলিয়ন ডলার বা বাংলাদেশী টাকার হিসেবে ২,৪৩,১০০ কোটি টাকার সমান।

বাংলাদেশের রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রদত্ত তথ্যমতে, ২০১৯-২০ অর্থ বছরের জুন পর্যন্ত বাংলাদেশ ৩৩.৬৭ বিলিয়ন ডলারের পন্য সারা বিশ্বে রপ্তানি করে এবং যা ২০১৮-১৯ অর্থ বছর অপেক্ষা ২৫.৯৯% কম ছিল। যেখানে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৫.৫০ বিলিয়ন ডলার।

আবার ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে দেশের মোট রপ্তানি আয় ৪০.৫৩ বিলিয়ন ডলারে পৌছে যায়। ২০১৭-১৮ সালে মোট রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ছিল ৩৬.৬৬ বিলিয়ন ডলার এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩৪.৮৫ বিলিয়ন ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের রপ্তানি আয়ের তুলনায় ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি হয় ৫.৮১ শতাংশ।

গত ২০০৮-২০০৯ অর্থ বছরে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ছিল মাত্র ১৫.৫০ বিলিয়ন ডলার। তারপর থেকে প্রতি বছরই ধারাবাহিক ভাবে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পেতে থাকে। আর এখন চলতি ২০২০-২১ অর্থ বছরের জুলাই ২০ থেকে মার্চ ২১ সময় পর্যন্ত ৯ মাসে মোট রপ্তানির আয় থেকে দেশে ২৮.৯৪ বিলিয়ন ডলার আসে। যদিও ২০২০ সালের শুরু থেকে চলা করোনা মহামারির বিরুপ প্রভাবে সারা বিশ্ব অর্থনীতি মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। যার নেতিবাচক প্রভাব কিছুটা হলেও বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

আবার যেখানে ২০১২-১৩ অর্থ বছরে বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয় ছিল ২৭.০৪ বিলিয়ন ডলার, ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে রপ্তানি আয় ছিল ৩০.১০ বিলিয়ন ডলার, ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে ৩১.২০ বিলিয়ন ডলার, ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে ৩৪.২০ বিলিয়ন ডলার এবং ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ৩৪.৮৫ বিলিয়ন ডলার।

বৈশ্বিক পর্যায়ের বেশ কিছু দেশের ২০১৯-২০ অর্থ বছরের সার্বিক রপ্তানি আয় এবং চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দক্ষিণ এশিয়ার উদীয়মান অর্থনৈতিক পরাশক্তি ভারতের মোট রপ্তানির পরিমাণ ৩১৩ বিলিয়ন ডলার এবং বিশ্বের বৃহৎ অর্থনীতি ও রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে ২০২০ চীনের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ২.৫৯ ট্রিলিয়ন ডলার। যা একক দেশ হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ পরিমাণে রপ্তানি আয় হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। অথচ বিশ্বের এক নম্বর অর্থনৈতিক ও সামরিক সুপার পাওয়ার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সার্বিক জিডিপি এর আকার বিশ্বের সর্বোচ্চ ১৯ ট্রিলিয়ন ডলার দেখনো হলেও ২০২০ সালে রপ্তানি আয় ধারাবাহিকভাবে কমে এসে ১.৪৩ ট্রিলিয়ন ডলারে ঠেকেছে। তবে দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ পাকিস্তান ২০২০ সালে ২২.৫১ বিলিয়ন ডলার এবং ২০১৯ সালে ২৩.৩৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য বিশ্ব বাজারে রপ্তানি করে।

এখানে প্রকাশ থাকে যে, বরাবরের মতো বাংলাদেশের তৈরি পোশাক (নিটওয়্যার ও ওভেন) শিল্প সার্বিক রপ্তানি বৃদ্ধিতে ইতিবাচক এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে বিগত তিন দশক থেকেই। চলতি ২০২০-২১ অর্থ বছরের মার্চ পর্যন্ত প্রথম ৯ মাসে দেশের মোট রপ্তানি ২৮.৯৪ বিলিয়ন ডলার হলেও শুধুমাত্র তৈরি পোশাক রপ্তানি খাত থেকে আয় হয়েছে ২৩.৪৯ বিলিয়ন ডলার। যা কিনা মোট রপ্তানির ৮১.১৭ শতাংশ।

আবার এদিকে আমাদের দেশের অন্যান্য সকল খাতের রপ্তানি আয় মাত্র ৫.৪৫ বিলিয়ন ডলার এবং যা কিনা মোট রপ্তানির মাত্র ১৮.৮৩ শতাংশ। যেখনে কিনা তৈরি পোশাক রপ্তানি আয়ের একটি বড় অংশ ৫৫-৬০ শতাংশ পর্যন্ত ব্যয় হয়ে যায় তৈরি পোশাক উৎপাদনের কাঁচামাল, মুলধনী যন্ত্রপাতি বিদেশ থেকে আমদানি করতে। তাই মোট দেশজ রপ্তানিতে তৈরি পোশাক শিল্পের (আরএমজি) অবদান বাদ দিলে আমাদের অন্যান্য খাতের রপ্তানি আয় ও পরিমাণ যথেষ্ঠ পরিমানে কম। আর এটি কিন্তু কোন অবস্থাতেই বাংলাদেশের মতো অত্যন্ত সম্ভাবনাময় বা উদীয়মান অর্থনীতি এবং বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭.৫০ শতাংশ হারে জিডিপি অর্জনকারী দেশের জন্য মোটেও কাম্য হতে পারে না।

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.