--- বিজ্ঞাপন ---

পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালিতে সামরিক অভ্যুত্থান

0

পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালিতে সামরিক অভ্যুত্থান হওয়ার গুঞ্জন উঠেছে। মালির সামরিক বাহিনী সে দেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে আটক করেছে। তবে ঠিক কি হয়েছে তা এখনও পরিস্কার হয় নি। তবে বলা হচ্ছে, অন্তর্বর্তী সরকারের মন্ত্রিসভায় রদবদল করার পর আটক অভিযান চালানো হয়। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ খবর নিশ্চিত করা হয়েছে।

দয়েৎসেভেলে জানায়, গ্রেপ্তারের পর নেতাদের নিয়ে যাওয়া হয় মালির রাজধানী বামাকোর পাশে অবস্থিত কাটি সামরিক ঘাঁটিতে। দেশের মন্ত্রিসভায় অদলবদল ঘটলে সোমবার মন্ত্রী পদ হারান দুই সেনা সদস্য। এরপরই সামরিক বাহিনীর এই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নেতৃত্বকে বন্দি করার ঘটনা ঘটে।

এদিকে বন্দি হওয়া নেতাদের মুক্তির দাবি জানিয়ে এই অভ্যুত্থানের নিন্দা করেছে জাতিসংঘ, আফ্রিকান ইউনিয়ন ও ইকোনমিক কমিউনিটি অফ ওয়েস্ট আফ্রিকান স্টেটস বা ইকোয়াস। এই ‘এটেম্পটেড ক্যু’ বা অভ্যুত্থানের প্রয়াসকে নাকচ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এভাবে নেতাদের বন্দি করাকে ‘অপহরণ’ বলেছে।

জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনেরাল আন্তোনিও গুতেরেস বলেন যে তিনি এন’দাও ও ওয়ানের গ্রেপ্তার হওয়া নিয়ে বিশেষভাবে চিন্তিত। টুইটারে তিনি বলেন, “আমি তাদের নিঃশর্ত ও শান্তিপূর্ণ মুক্তির দাবি জানাচ্ছি।”

ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট শার্ল মিশেল সোমবারে ইইউ বৈঠকের পর ব্রাসেলসে সাংবাদিকদের বলেন, “যা হয়েছে তা খুবই গুরুতর। আমাদের যা পদক্ষেপ নিতে হবে, তার জন্য আমরা তৈরি।”

উল্লেখ্য, গত আগস্টে, তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম বুবুকার কেইটাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করে সামরিক বাহিনী। ফলে, সেপ্টেম্বর মাসে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করেন এন’দাও। ১৮ মাসের জন্য ক্ষমতায় থাকা অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ হলো এই সময়ের মধ্যে অবকাঠামো বদলে নির্বাচন সংগঠিত করা। অন্তর্বর্তী সরকারের বেশির ভাগ সদস্যই এককালে সেনা সদস্য ছিলেন। এমনকি এন’দাও নিজেও সেনাবাহিনীতে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

মালি পশ্চিম আফ্রিকার একটি রাষ্ট্র। এর রাজধানীর নাম বামাকো। পশ্চিম আফ্রিকার এই বড় দেশটির উত্তরে প্রায় অর্ধেক জুড়ে রয়েছে সাহারা মরুভূমি। দেশের বাকি অংশ জুড়ে রয়েছে সবুজ তৃণভূমি। গরিব কৃষি ভিত্তিক দেশটিতে বিভিন্ন সময়ে খরায় বহু মানুষ ও প্রাণীর মৃত্যু হয়েছে। দেশের অধিকাংশ মানুষ কৃষ্ণকায় আফ্রিকি, তাদের বাস গ্রামাঞ্চলে, জীবিকা কৃষিকাজ ও পশুপালন। মালিতে বহু খনিজ পদার্থ থাকলেও তার ব্যবহার খুব অল্প। ৩০০ থেকে ১৫০০ অব্দ পর্যন্ত দেশটি আফ্রিকার তিনটি শক্তিশালী সাম্রাজ্য ঘানা, মালি ও সোঙ্গাই সাম্রাজ্যের অংশ ছিল। ১৮৯৫ থেকে ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত ফরাসিদের অধিকারে ছিলো দেশটি। ১৯৬০ সালে মালি স্বাধীনতা লাভ করে। ১৯৯১ সালে মালি স্বৈরশাসন থেকে মুক্ত হয় এক সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে। ১৯৯২ সালে অনুষ্ঠিত হয় গণতান্ত্রিক নির্বাচন। মালির অধিকাংশ মানুষ ইসলাম ধর্মাবলম্বী। ২০১১ সালে থেকে দেশের উত্তর প্রান্তে তুয়ারেগ জাতি গোষ্ঠীর বিদ্রোহ দেখা দেয়। বিদ্রোহ দমনে সরকারি ব্যর্থতার অভিযোগে মাঝা্রি পদের কিছু সেনা ২০১২ সালের ২২ মার্চ রাষ্ট্রপতি আমাদো টোরেকে ক্ষমতাচ্যূত করে সামরিক শাসন জারি করে। ইকনমি কমিউনিটি অব ওয়েস্ট আফ্রিকান স্টেটস’এর মধ্যস্থতায় এপ্রিল মাসে অসামরিক শাসন পুনর্বহাল হয়, অন্তর্বর্তী রাষ্ট্রপতি হন ডিওনকোন্ডা ট্রারোরে। অভ্যুত্থান পরবর্তী বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে দেশের উত্তর প্রান্তের তিনটি অঞ্চল অধিকার করে নেয় বিদ্রোহীরা। ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে অঞ্চলগুলি পুনর্দখলে অভিযান শুরু করে সেনাবাহিনী।  গত কয়েক বছরে, মালিতে নানা ধরনের রাজনৈতিক ও মানবিক সংকট দেখা গেছে।

সূত্রগুলো জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট বাহ এনদাও, প্রধানমন্ত্রী মোখতার উয়ানে এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী সোলাইমান ডোকুরেকে রাজধানী বামাকোর বাইরে কাটি সামরিক ঘাঁটিতে নেয়া হয়েছে।

মালির প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে আটকের এই ঘটনা নতুন করে দেশটির রাজনৈতিক পরিবেশ অনিশ্চিত করে তুলল। গত আগস্ট মাসে সামরিক অভ্যুত্থান হয় এবং অভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম বুবাকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয় । এনদাও এবং উয়ানে ১৮ মাস মেয়াদি অন্তর্বর্তী সরকারের কাজকর্ম দেখাশুনা করছিলেন এবং তারা দেশে আবার বেসামরিক শাসন ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা চালাচ্ছিলেন। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের মন্ত্রিসভা থেকে দুই সেনা সদস্যকে সরিয়ে দেয়ার পর প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে আটক করা হয়।#

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.