--- বিজ্ঞাপন ---

ভারতের খ্যাতনামা সাংবাদিক জুবাইর গ্রেফতার

0

জনপ্রিয় ফ্যাক্ট-চেকিং ওয়েবসাইট অল্ট নিউজের সহপ্রতিষ্ঠাতা জুবাইরকে সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানী নয়াদিল্লি থেকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর তাকে এক দিনের রিমান্ডে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। স্থানীয় কর্মকর্তা ও সংবাদ মাধ্যমের বরাতে আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।

ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের কঠোর সমালোচক হিসেবে পরিচিত সাংবাদিক জুবাইর। সম্প্রতি একটি টেলিভিশন বিতর্কে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করেন বিজেপির মুখপাত্র নূপুর শর্মা। তার ওই মন্তব্যের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরেন জুবাইর। এ ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী মোদি সরকার বড় সংকটে পড়ে। মুসলিম বিশ্ব বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো ক্ষোভে ফেটে পড়ে। নয়াদিল্লির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদের পাশাপাশি (মহানবীকে নিয়ে আপত্তিকর) মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানায়। মূলত ওই ঘটনার কয়েক সপ্তাহ পর জুবাইরকে গ্রেফতার করা হলো। গণমাধ্যম সংগঠনগুলোর একটি নেটওয়ার্ক জানিয়েছে, সাংবাদিক জুবাইরের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের এক টুইটে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগ আনা হয়েছে।

আল জাজিরা জানিয়েছে, চলতি মাসে বালাজিকিজাইন নামে একটি টুইটার হ্যান্ডেল থেকে অভিযোগ করা হয়, হিন্দু দেবতা হনুমানের নামে নামকরণ করা একটি হোটেল নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করে হিন্দুদের অপমান করেছেন সাংবাদিক জুবাইর। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে তাকে বিচারের আওতায় আনারও দাবি জানানো হয়েছে। এছাড়া তার গ্রেফতারের পাঁচদিন আগে বিজেপি সরকারের পক্ষ থেকে টুইটার কর্তৃপক্ষকে একটি পাঠানো হয়। তাতে বলা হয়, সাংবাদিক জুবাইরের টুইটার অ্যাকাউন্ট ভারতীয় আইন লঙ্ঘন করেছে।

অল্ট নিউজের আরেক সহ-প্রতিষ্ঠাতা প্রতীক সিনহা এক টুইটার বার্তায় বলেছেন, গ্রেফতারের আগে জুবাইরকে কোনো নোটিশ দেওয়া হয়নি যা দেওয়া বাধ্যতামূলক। প্রতীক আরও বলেন, গ্রেফতারের পর জুবাইরকে এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে নয়াদিল্লির বুরারি এলাকায় পুলিশ বাসের মধ্যে আটকে রাখা হয়।

পৃথক এক টুইটার বার্তায় প্রতীক জানান, গ্রেফতারের সময় জুবাইরের সঙ্গেই ছিলেন তিনি। তিনি বলেন, মেডিকেল পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জুবাইরকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কোথাও নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তা আমাকে কিম্বা জুবাইরেরর আইনজীবী কাউকে কিছু বলা হচ্ছে না। আমরা তার সঙ্গে পুলিশ বাসেই ছিলাম। কোনো পুলিশেরই বুকে নেমপ্লেট ছিল না। ভারতের তথ্য প্রযুক্তির শহর বেঙ্গালুরুর ছেলে জুবাইর পেশায় একজন তথ্য-প্রযুক্তি প্রকৌশলী। আর প্রতীক সিনহা সফটওয়্যার প্রকৌশলী। দুইজন মিলে ২০১৭ সালে ফ্যাক্ট চেকিং ওয়েবসাইট অল্ট নিউজ প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে অসংখ্য ভুয়া খবর শনাক্ত করেছে। এসব খবরের বেশিরভাই হন্দু কট্টর ডানপন্থী নিউজ পোর্টাল থেকে ছড়ানো হয়। এছাড়া ক্ষমতাসীন বিজেপি নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের বিভিন্ন দাবি মিথ্যা প্রমাণ করেছে ওয়েবসাইটটি।

জুবাইরের গ্রেফতার ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। তার এ গ্রেফতারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করছেন সচেতন মহল। বিরোধী দলের নেতা ও অধিকারকর্মী ও সংগঠনগুলো ইতোমধ্যে জুবাইরের মুক্তি দাবি করেছেন। তারা বলছেন, যারা ক্ষমতাসীনদের বিভিন্ন বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ও দাবির অসারতা জনসম্মুখে তুলে ধরেন, তাদের দমনেই এটি হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকারের সুস্পষ্ট প্রচেষ্টা।

দেশটির অনেক সাংবাদিক অবিলম্বে মোহাম্মদ জুবাইরের মুক্তি দাবি করেছেন। সাংবাদিক রানা আইয়ুব বলেন, ‘জুবাইর নিয়মিত ভুয়া খবর ফাঁস করে দিতেন। ভারতে বিদ্বেষ ছড়ানো চক্রের মুখোশ খুলে দিতেন তিনি। এ জন্যই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হলো। দেশের অধঃপতন নিয়ে যারা লিখছেন ও তথ্য সংগ্রহ করছেন, তাদের শাস্তি দিচ্ছে সরকার।’

বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতা রাহুল গান্ধী এক টুইটে বলেছেন, যারাই বিজেপির বিদ্বেষ, ধর্মান্ধতা ও মিথ্যা নিয়ে বলবে, প্রত্যেকেই তাদের কাছে হুমকিস্বরূপ। তিনি বলেন, একজন সত্যবাদীকে গ্রেপ্তার কেবলই হাজারো সত্যবাদীর জন্ম দেবে।#

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.