--- বিজ্ঞাপন ---

জ্বালানী তেল রপ্তানির মাধ্যমে শক্তিশালী অবস্থানে সৌদি আরব

0

সিরাজুর রহমান#

সারা বিশ্বের বড় বড় কর্পোরেশন এবং গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজগুলো চলমান বৈশ্বিক মহামন্দার মুখে ব্যাপক সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এখন অধিকাংশ কোম্পানি অর্থ বাঁচাতে কর্মী ছাটাই এর মতো কঠিন পথ বেঁছে নিয়েছে। সেখানে কিনা বড় অংকের মুনাফা অর্জন করে বিশ্বকে চমকে দিয়েছে সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন আরামকো কোম্পনি। চলতি অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে তেল উৎপাদন এবং রপ্তানিকারক কোম্পানি হিসেবে আরামকো নীট মুনাফা হয়েছে ৪২.৪ বিলিয়ন ডলার।

তাছাড়া চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ৩৯.৫ বিলিয়ন ডলার এবং দ্বিতীয় প্রান্তিকে নীট মুনাফা হয় ৪৮ বিলিয়ন ডলার। সে হিসেবে চলিত অর্থবছরের চতুর্থ প্রান্তিক শেষে ১২ মাসে মোট ১৫৮ বিলিয়ন ডলারের নীট মুনাফা অর্জন করার বিষয়ে প্রবলভাবে আশাবাদী সৌদি আরামকো কোম্পানি। বর্তমানে সৌদি আরব প্রতিদিন গড়ে ৭৫ লক্ষ ব্যারেল ক্রুড অয়েল উত্তোলন করে সারা বিশ্বে রপ্তানি করে থাকে। দেশটির তেল রপ্তানির আয়ের শতভাগ কিন্তু রাষ্ট্রীয় মালিকানায় নিয়ন্ত্রিত হয়।

আর সেই সাথে আরামকো কোম্পানি ২.১৭ ট্রিলিয়ন ডলারের মোট মার্কেট ক্যাপিটাল ভ্যালু নিয়ে পৌঁছে গেছে বিশ্বের একেবারে শীর্ষস্থানীয় কোম্পানির তালিকায়। তাছাড়া ২০২১ সালের ৩১শে মার্চের হিসেব অনুযায়ী আরামকো কোম্পানি নীট মুনাফা অর্জন করে ১০৫.৩৭ বিলিয়ন ডলার। নীট আয়ের দিক দিয়ে ৯৪.৬৮ বিলিয়ন ডলার আয় করে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্থানে থাকে মার্কিন টেক জায়ান্ট এ্যাপল এবং ৩৩.৩৭ বিলিয়ন ডলার নীট প্রফিট অর্জন করে তৃতীয় সর্বোচ্চ স্থানে থাকে মার্কিন রিটেইলার কোম্পানি আমাজন।

এদিকে সৌদি আরবের অর্থনীতি গ্যাস ও জ্বালানী তেল রপ্তানি নির্ভর শিল্পের উপর ভিত্তি করে অত্যন্ত শক্তিশালী অবস্থানে উঠে এসেছে। মাত্র ৩ কোটি ৬১ লক্ষ জনসংখ্যার দেশ সৌদি আরবের অর্থনীতি ঠিক কতটা শক্তিশালী তা জানতে হলে তাদের হাতে মজুত থাকা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং মোট রপ্তানির পরিমাণ সম্পর্কে ধারনা লাভ করতে হবে। চলতি ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসের হিসেব অনুযায়ী সৌদি আরবের কাছে ৪৫৭.৪৫ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রা এবং আনুমানিক ৪০০ টন সোনার রিজার্ভ রয়েছে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে। তাছাড়া মার্কিন আপত্তি উপেক্ষা করে নজিরবিহীনভাবে সৌদি আরব বৈদেশিক মুদ্রা হিসেবে ডলারের পাশাপাশী চীনের মুদ্রা ইউয়ান রিজার্ভ করা শুরু করেছে।

২০২১ সালে সারা বিশ্বে মোট তেল ও গ্যাস রপ্তানি করে ২৮৯.৮২ বিলিয়ন ডলার এবং ২০২০ সালে ১৮৪.১৬ বিলিয়ন ডলার। যদিও চলতি ২০২২ সালের জুলাই মাসে ৩৭.৫ বিলিয়ন ডলারের ক্রুড ওয়েল সারা বিশ্ব রপ্তানি করেছিল। তবে দেশটি প্রতি বছর বিপুল পরিমাণে ক্রুদ ওয়েল সারা বিশ্বে রপ্তানি করলেও তাদের বৈশ্বিক আমদানি কিন্তু মোটেও কম নয়। ২০২১ সালের ১২ মাসে সৌদি আরব ২১৩.০২ বিলিয়ন ডলার এবং ২০২০ সালে ১৮২ বিলিয়ন ডলারের পন্য ও সেবা সারা বিশ্ব থেকে আমদানি করেছিল। দেশটির অর্থনীতি যথেষ্ঠ শক্তিশালী হলেও তার পাশাপাশি বৈদেশিক ঋন ও দেনার পরিমাণ কিন্তু মোটেও কম কিছু নয়। ২০২২ সালের জুন মাসের হিসেব অনুযায়ী সৌদি আরবের মোট বৈদেশিক ঋন অ দেনার স্থিতির পরিমাণ ছিল ২৫৬ বিলিয়ন ডলার। তবে দেশটির অর্থনৈতিক সক্ষমতার বিচারে তা কিন্তু অনেকটাই সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে বলেই প্রতিয়মান হয়।

তাছাড়া সৌদি আরব বিগত এক দশকে সারা দেশে অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়নের জন্য প্রায় ৫০০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করছে এবং তার পাশাপাশি সামরিক ও প্রতিরক্ষা বাজেট দেখলে যে কেউই চমকে যেতে পারে পারে। বিশেষ করে ২০১০ সাল থেকে সৌদি সালমান সরকার প্রতি বছর গড়ে ৬৮ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে নতুন নতুন অস্ত্র ও সামরিক সাজ সরঞ্জাম ক্রয় ও দেশটির সামরিক খাত আধুনিকায়নে। এত বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করার পরেও দেশটির কোষাগারে ৪৫০ বিলিয়ন ডলারের অধিক বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থাকাটা এক অর্থে একটি শক্তিশালী এবং স্থিতিশীল অর্থনীতির দেশ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে সৌদি আরব।#

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.