বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরারের বাড়ীতে শোকের মাতম

ডেস্ক নিউজ:: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ নিহত হওয়ার ঘটনায় তার গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। তার মায়ের আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে।

ফাহাদের গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়া শহরের পিটিআই সড়কে। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, পরিবারের সদস্যরা কান্নাকাটি করছেন। তার মা বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। পরিবারের সদস্যরা বুঝে উঠতে পারছেন না, এত মেধাবী, শান্ত ছেলেটিকে কারা হত্যা করল। পরিবার জানিয়েছে, ফাহাদের কোনো শত্রু ছিল না। তাদের পুরো পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সমর্থক। তাদের সন্তানকে কেন এভাবে জীবন দিতে হলো, বুঝে উঠতে পারছেন না।

ফাহাদের বাবার নাম বরকতুল্লাহ। তিনি বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের নিরীক্ষক কর্মকর্তা ছিলেন। মা রোকেয়া খাতুন একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষক। দুই ভাইয়ের মধ্যে আবরার ফাহাদ বড়। ছোট ভাই আবরার ফায়াজ ঢাকা কলেজের উচ্চমাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। সেও ঢাকা কলেজের হোস্টেলে থাকে। বুয়েটের শেরেবাংলা হলের কাছেই তার হোস্টেল। কুষ্টিয়ার পিটিআই সড়কে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফের বাসার পাশেই তাদের বাড়ি।

পরিবারের সদস্যরা জানান, ১০ দিন আগে ছুটিতে দুই ভাই বাড়িতে এসেছিলেন। ২০ তারিখ পর্যন্ত বাড়িতে থাকতে চেয়েছিলেন আবরার। তবে সামনে পরীক্ষা, পড়া হচ্ছে না বলে গতকাল ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। ফাহাদের মা রোকেয়া খাতুন বলেন, ‘গতকাল সকালে আমি তাকে নিজে ঘুম থেকে ডেকে তুলি। সে ঢাকায় রওনা দেয়। মাঝে তিন থেকে চারবার ছেলের সঙ্গে কথা হলো আমার। বিকাল ৫টায় হলে পৌঁছে ছেলে আমাকে ফোন দেয়। এর পর আর কথা হয়নি। রাতে অনেকবার ফোন দিয়েছিলাম, ফোন ধরেনি।’

ছেলের হত্যাকারীদের খুঁজে বের করার দাবি জানান তিনি। চাচা মিজানুর রহমান বলেন, সে শিবিরের কর্মী, এমন কথা রটাচ্ছে সবাই। এটা বানোয়াট, আমরা সবাই আওয়ামী লীগের সমর্থক। হানিফ সাহেবের বিভিন্ন মিটিংয়েও আমরা যাই। আবরার এমনিতে তাবলিগে যেত। বুয়েটে ভর্তির পর দুই-তিনবার সে তাবলিগে গিয়েছিল।

গত রবিবার রাতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদকে (২১) পিটিয়ে হত্যা করা হয়। দেশের সবচেয়ে মেধাবী যারা তারাই বুয়েটের ছাত্র। আর এ ছাত্রদের মধ্যে কয়েকজন মিলে তাকে হত্যা করে। অভিযোগ উঠেছে, ফেসবুকের একটি স্ট্যটাসকে কেন্দ্র করে এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। তবে পুলিশ এখনও নিশ্চিতভাবে কিছু বরছে না। তারা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে সোমবার সকালে দুজনকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল রোববার দিবাগত রাত তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই-বাংলা হলের নিচতলা থেকে আবরারের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সকালে এ ঘটনায় আটক দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চকবাজার থানায় নিয়ে আসা হয়েছে।টক দুজন হলেন ফুয়াদ ও রাসেল। তাঁরা দুজনই বুয়েটের শিক্ষার্থী। শের–ই–বাংলা হলে থাকেন।

চক বাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহরাব হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ফুয়াদ ও রাসেল নামে দুজনকে আটক করে থানায় আনা হয়েছে। তাঁরা দুজনই বুয়েটের শিক্ষার্থী, শের–ই–বাংলা হলে থাকেন। পুলিশ ও আবরারের সহপাঠী সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রাতে হলের কক্ষে ছিলেন আবরার। হল থেকে তাঁকে রাতে কোনো একসময় বাইরে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর কে বা কারা তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করে। সহপাঠীরা জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আবরার সক্রিয় ছিলেন। লেখালেখি করতেন। এ কারণে এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন তাঁরা।

পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মুনতাসিরুল ইসলাম বলেন, ‘আবরারের পায়ে ও ঊরুতে আঘাতের চিহ্ন ছিল। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, আঘাতজনিত কারণে তাঁর মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। আমরা সতর্কতার সঙ্গে কাজ করছি। কারণ বুয়েট একটি সম্মানজনক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আমরা তদন্ত করছি।’

চকবাজার থানার উপপরিদর্শক (এসআই) দেলোয়ার হোসেন বলেন, রাত পৌনে ৩টার দিকে তাঁরা খবর পান শের-ই–বাংলা হলের বাইরে নিচতলায় একটি ছেলে পড়ে আছে। হল কর্তৃপক্ষই পুলিশকে খবর দেয়। খবর পেয়ে তিনটার দিকে ঘটনাস্থলে যান তাঁরা। ছেলেটির পরনে ছিল ট্রাউজার ও শার্ট। কোনো কিছু দিয়ে বাড়ি দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। লাশের ময়নাতদন্ত হবে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

ফাহাদ বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (১৭ তম ব্যাচ) শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি শের-ই–বাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন।  বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে (২১) পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।  রোববার দিবাগত রাত ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই–বাংলা হলের নিচতলা থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ ও আবরারের সহপাঠী সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রাতে হলের কক্ষে ছিলেন আবরার। হল থেকে তাঁকে রাতে কোনো একসময় বাইরে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর কে বা কারা তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করে। সহপাঠীরা জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আবরার সক্রিয় ছিলেন। লেখালেখি করতেন। এ কারণে এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন তাঁরা। ‘###(সূত্রঃ প্রথম আলো/যুগান্তর)