--- বিজ্ঞাপন ---

চট্টগ্রাম বিমান বন্দর থেকে শহরে ফ্লাইওভার, নকশায় পরিবর্তন

0

চট্টগ্রামের উন্নয়নে বর্তমান সরকার গৃহীত বৃহৎ প্রকল্পগুলোর মধ্যে একটি হল ৩,২৫০ কোটি টাকার বৃহৎ প্রকল্প ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে’। সাড়ে ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই ফ্লাইওভার প্রকল্পের বন্দর অংশে বন্দরের জেটি সহ কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার জন্য নকশা এ্যালাইনমেন্ট স্থানান্তরের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ আপত্তি তোলে। বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম যাতে ব্যাহত না হয় এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রকৌশল বিভাগ থেকে আপত্তির পর অবশেষে এর মূল নকশায় পরিবর্তন আনা হল। প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের উচ্চতর পর্যায়ের কয়েক দফা বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের পর এখন কাজে হাত দেয়া হয়েছে বলে সিডিএ সূত্রে জানা গেছে ।
বন্দরের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার সাথে সামঞ্জস্য নয় বিধায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের আপত্তির পর নকশায় এ পরিবর্তন আনা হয়েছে বলে বন্দরের উদ্ধর্তন সূত্রে জানা গেছে। জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রকৌশল) এর তত্বাবধানে বাস্তবায়নকারী সংস্থা সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালককে অন্তর্ভুক্ত করে এ সমস্যা নিরসনে একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করা হয়। চট্টগ্রাম বন্দরের প্রধান প্রকৌশলীকে আহবায়ক করে ৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি কাজ শুরু করেন। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সভাকক্ষে গত ২০ ও ২৭ জুন এবং ১৪ ও ১৫ জুলাই’র বৈঠকে উভয় সংস্থার এ সংক্রান্ত কমিটির সদস্যগণের মধ্যে বৈঠকের পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এসকল বৈঠকে কমিটির সদস্যগণ ছাড়াও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল জুলফিকার আজিজ, সদস্য প্রকৌশল কমডোর খন্দকার আক্তার হোসেন উপস্থিত ছিলেন। এসকল বৈঠকে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স ম্যাক্স-র‌্যানকেন জয়েন্ট ভেনচ্যুর প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি এবং তাদের প্রধান ডিজাইনার ও পরামর্শ প্রতিষ্ঠান ডিডিসি-সার্ম-ডিপিএম জেভি’র প্রতিনিধিও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের সময় উপস্থিত ছিলেন।
সিডিএ’র প্রকল্প সূত্রে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলছে, চট্টগ্রাম বন্দরের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার সাথে সামঞ্জস্য রেখেই নির্মাণাধীন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েকে বারিক বিল্ডিং থেকে সল্টগোলা ক্রসিং পর্যন্ত ফ্লাইওভারের নকশা ডিজাইন/লে-আউট পুন:গঠন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ নকশা পরিবর্তনের পর এখন বারিক বিল্ডিং সল্টগোলা ক্রসিং পর্যন্ত বিদ্যমান রাস্তার বাইরে পরিবর্তিত নকশা অনুযায়ী ফ্লাইওভারের এ্যালাইনমেন্টে স্থানান্তর করা হবে। এজন্য বারিক বিল্ডিং থেকে কাস্টম পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকায় কম বেশী ৩০-৪০ ফুট জমি অধিগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর ফলে ঐ সকল স্থান থেকে বেশ কিছু স্থাপনা আংশিক ও পূর্ণাঙ্গভাবে অপসারণ করার সিদ্ধান্তও গৃহীত হয়।
প্র্রকল্পটির সংস্থা বাস্তবায়নকারী সংস্থা সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস  বলেন, ‘বন্দর অংশটি যেহেতু দেশের অর্থনৈতিক প্রাণকেন্দ্র আমদানী রফতানীর প্রধান সমুদ্র বন্দর। এখান থেকে পণ্যসমূহ উঠানামা খালাস যাতে নির্বিঘেœ ঝামেলাবিহীন হয় সেজন্য এক্সপ্রেসওয়ের বন্দরের অংশটিতে নকশা ডিজাইন এ্যালাইনমেন্ট পরিবর্তন করা হয়েছে। এজন্য ৩০ থেকে ৪০ ফুট জমি অধিগ্রহণ করে বন্দরের বাইরে রাস্তাকে আরও সম্প্রসারণসহ এ্যালাইনমেন্ট করা হবে। আমরা কাজে হাত দিয়েছি, জায়গার সয়েল টেস্টও শুরু হয়েছে। এছাড়া এক্সপ্রেসওয়ের বিমানবন্দর অংশের কাজও চলছে পুরোদমে।’
গৃহীত সিদ্ধান্ত মোতাবেক বন্দরের আইএসপিএস কোড অনুযায়ী বন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বারেক বিল্ডিং হতে সল্টগোলা পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দৈঘ্যের প্রয়োজনীয় উচ্চতার সেফটি ও সিকিউরিটি ব্যারিয়ার সংযোগ করা হবে। বন্দরের লরি, কন্টেইনার, কাভার্ড ভ্যানসমূহ বন্দরে প্রবেশ ও বাহির হওয়ার সময় যাতে বাধাপ্রাপ্ত না হয় সেজন্য ফ্লাইওভারের ক্লিয়ার উচ্চতা ইত্যাদি সংশোধন করে নকশায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। কাস্টমস ও নিমতলা জংশনের পিয়ার বাদ দিয়ে জংশনকে উম্মুক্ত রাখা হবে যাতে করে স্প্যান সমূহ আরও লম্বা হয়। এছাড়া বিমানবন্দর হতে আগত গাড়ী বন্দরে নামার জন্য নিমতলা মোড়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব জায়গায় একটি ডাউনওয়ার্ড র‌্যাম্প স্থাপন করা হবে। পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টম হতে বিমানবন্দর অভিমুখী গাড়ী ফ্লাইওভার এ উঠার জন্য সল্টগোলা মোড়ের পরে আপওয়ার্ড র‌্যাম্প সংযোজন করা হবে।
সিডিএ’র প্রকল্প পরিচালক মো: মাহফুজুর রহমান বলেন, বন্দর অংশের কাজে এখন আর কোন ঝামেলা নেই। আমরা সয়েল টেস্ট মাটি পরীক্ষার কাজে হাত দিয়েছি। কাজ শুরু হয়ে গেছে। নকশার এই পরিবর্তনের আওতায় এখন বারিক বিল্ডিং মোড়ে মাঝিরঘাট হতে প্রস্তাবিত আপওয়ার্ড র‌্যাম্প বাদ দিয়ে কমার্স কলেজ এর সাথে মাঝিরঘাট রোডের সংযোগ সড়কটি যান চলাচলে উপযোগী করে প্রশস্ত করে তোলা হবে। যাতে করে মাঝিরঘাট ও সদরঘাট হতে আগত গাড়ীসমূহ আগ্রাবাদে প্রস্তাবিত র‌্যাম্প ব্যবহার করে ফ্লাইওভারে উঠতে পারবে। বন্দরের ট্রাফিক জ্যাম নিরসণের লক্ষ্যে সিইপিজেড (চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল) এর গাড়ী সমূহ যাতে সিমেন্ট ক্রসিং থেকে সল্টগোলা ক্রসিং এর রাস্তা ব্যবহার না করে সেজন্য সিইপিজেড এর সাথে রিং রোডের ডাইভার্সন সড়ক নির্মাণ করা হবে।
সূত্রে জানা গেছে, সল্টগোলা হতে সিমেন্টক্রসিং পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পাইলিং ও ফাউন্ডেশনের কাজ শুরু করার পূর্বে পতেঙ্গা, সিইপিজেড ও কেইপিজেড (কোরিয়ান ইপিজেড) হতে আগত কন্টেইনারবাহী গাড়ী ও কাভার্ড ভ্যানসমূহ বন্দরে প্রবেশ করার জন্য সিমেন্টক্রসিং হতে সল্টগোলা পর্যন্ত বিদ্যমান ভিআইপি রোড ব্যবহার না করে সিডিএ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন রিং রোড দিয়ে হালিশহর, আনন্দবাজার হয়ে বড়পোলে প্রবেশ করে পোর্ট কানেক্টিং রোড ব্যবহার করবে। সেক্ষেত্রে রিং রোড হতে বড়পোল পর্যন্ত বিদ্যমান সংযোগ সড়কটি সংস্কার করে ট্রাফিক বিভাগের সহযোগিতায় একমুখী চলাচল নিশ্চিত করা হবে। এবং এজন্য সিডিএ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সী-বীচ থেকে আনন্দ বাজার পর্যন্ত রিং রোডটি যানচলাচলের জন্য উপযোগী করে খুলে দেয়ার সিদ্ধান্তও গৃহীত হয় বন্দর অংশের ঐ বৈঠকে।
চট্টগ্রাম দেশের প্রধান বন্দর কেন্দ্রিক নগরী ও বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে বিবেচিত। দেশী-বিদেশী বিনিয়োগে ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠিত শিল্পাঞ্চল ও নির্মীয়মান ইকনমিক জোনের এ নগরী দেশের প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের কেন্দ্রবিন্দু। কোনপ্রকার যানজট ছাড়াই যাতে বিনিয়োগকারী দেশী-বিদেশী শিল্পোদ্যেক্তারা চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হতে সোজা মূল শহরে ৩০ মিনিটে পৌঁছুতে পারে চট্টগ্রামের উন্নয়নে গৃহীত বড় বড় প্রকল্পসমূহের মধ্যে সাড়ে ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ অন্যতম ‘এলিভেটেড এক্্রপ্রেসওয়ে’ প্রকল্পের অন্যতম লক্ষ্য। চট্টগ্রামের তথা দেশের সর্ববৃহৎ সাড়ে ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সপ্রেসওয়ের কাজকে মূল নকশা অনুযায়ী ৬ টি অংশে ভাগ করা হয়েছে। এ প্রকল্পের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ অংশটি হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরের পাশ দিয়ে যাওয়া বারেকবিল্ডিং-সল্টগোলার ২,৯০০ মিটার ফ্লাইওভারের চার লেনের অংশ।
চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্ধর্তন কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, বন্দর কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের আন্তর্জাতিক গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে বলা হয়, যেহেতু এটি বাংলাদেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর ও দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু। এ বন্দরে আন্তর্জাতিক আইএসপিএস (ইন্টারন্যাশনাল শীপ এন্ড পোর্ট ফেসিলিটি সিকিউরিটি) কোড অনুযায়ী পণ্য চলাচলে কোন প্রকার ব্যাঘাত না ঘটে সে বিষয়ে গুরুত্বআরোপ করা হয়। এক্ষেত্রে কোন প্রকার ব্যাঘাত ঘটলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ এসকল বিষয়গুলি মনিটর করে বন্দরের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ সহ কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। এসকল বিষয়গুলি মেনে চলা হচ্ছে কিনা সেজন্য উভয় পক্ষের আলোচনার পর ফ্লাইওভারের লে-আউট/ডিজাইন বিষয়টি পুনরায় পরীক্ষা নিরীক্ষা করার জন্যই একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করে এ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
অতীতে যানজটের কারণে প্রায়শ:ই এসব শিল্প বিনিয়োগের সাথে জড়িতরা অনেকেই বিমানের ফ্লাইট ধরতে ব্যর্থ হয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। চট্টগ্রাম শহরের মূল কেন্দ্র থেকে বিমান বন্দরের ১৬-১৭ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে যানজটের কারণে ঘন্টার পর ঘন্টায় আটকা পড়তে হয়। চট্টগ্রামে বিমান বন্দরে কোনপ্রকার যানজট ছাড়াই পৌঁছানোর লক্ষ্য নিয়ে সরকার বন্দর নগরী চট্টগ্রামের জন্য এ বৃহৎ প্রকল্পটি হাতে নেন। মূলত: চট্টগ্রামবাসীর এ সমস্যাটিকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় এনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক ইচ্ছায় প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন দেন। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্র্তৃপক্ষ (সিডিএ) এ প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী সংস্থা। এর প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ৩,২৫০ কোটি ৮৩ লক্ষ ৯৪ হাজার টাকা। চট্টগ্রাম শহরের লালখানবাজার হতে শাহ-আমানত বিমানবন্দর পর্যন্ত সাড়ে ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘এলিভেটেড এক্সপেসওয়ে’ নামের এ প্রকল্প ২০১৭ সালের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি একনেক সভায় অনুমোদন পায়। প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৭ ইং জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুনে বাস্তবায়ন হওয়ার কথা রয়েছে।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্র্তৃপক্ষ (সিডিএ)’র মাধ্যমে বাস্তবায়িত এ প্রকল্পটির কাজ শহরের বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন ধাপে ভাগ করা হয়েছে।ছয়টি ধাপে বিভক্ত সাড়ে ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ মূল ফ্লাইওভারের কাজের অংশগুলি হচ্ছে, লালখানবাজার-দেওয়ানহাট(১৩০০ মিটার চার লেন), দেওয়ানহাট-বারেকবিল্ডিং(২০০০ মিটার চার লেন মূল ফ্লাইওভার), বারেকবিল্ডিং-সল্টগোলা(২৯০০ মিটার চারলেন মূল ফ্লাইওভার),সল্টগোলা-সিমেন্টক্রসিং( ৩১৫০ মিটার চারলেন মূল ফ্লাইওভার),সিমেন্টক্রসিং-কাঠঘর(২১৫০ মিটার চারলেন মূল ফ্লাইওভার),কাঠঘর-ভিআইপি রোড(২৩৫০ মিটার চারলেন মূল ফ্লাইওভার এবং সী বীচ থেকে ভিআইপি রোড ৮৫০ মিটার দুইলেন ফ্লাইওভার নির্মাণ)। ##২.১২.১৯

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.