--- বিজ্ঞাপন ---

উইঘুর মুসলিমঃ জানুন তাদের ইতিহাস (পর্ব ১)

0

আব্দুল্লাহ আরাফাত ##

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে। এই জাতিগোষ্ঠীর রয়েছে তাদের নিজস্ব সমাজ, সংস্কৃতি, দীর্ঘদিনের লালিত বিশ্বাস। উইঘুররাও তেমনি একটি জাতিগোষ্ঠী। উইঘুররা হচ্ছে বিশ্বের অন্যতম সমৃদ্ধশালী গোষ্ঠী যাদের রয়েছে দীর্ঘদিনের ইতিহাস। সাম্প্রতিক সময়ে এই জাতিগোষ্ঠীকে নিয়ে বিভিন্ন নির্যাতনের লোমহর্ষক ঘটনা গণমাধ্যমে উঠে আসছে। উইঘুরদের নিয়ে লেখা দুই পর্বের প্রথম পর্বে  আজ তাদের পরিচয়, ইতিহাস ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।

ভৌগোলিক অবস্থানঃ

চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে জিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুরদের বসবাস। এর আয়তন প্রায় ১৬ লক্ষ ৬৪ হাজার কিলোমিটার, যা বাংলাদেশের বর্তমান আয়তনের তুলনায় ১২ গুণ বড়। পূর্বে এটি ‘পূর্ব তুর্কেস্তান’ নামে পরিচিত ছিল। দীর্ঘ প্রতীক্ষা ও যুদ্ধের পর এই অঞ্চল ১৯৪৯ সালে চীনের অধীনে চলে আসে। চীনের এই অঞ্চলের সাথে ৮ টি দেশের আন্তর্জাতিক সীমান্ত রয়েছে।  বসবাসঃ

উইঘুররা বৃহত্তর পরিসরে চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে বসবাস করে। চীনের কমিউনিস্ট  শাসিত সরকারের সবচেয়ে বড় স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল হলো এই জিনজিয়াং। জিনজিয়াং এর মাত্র ৯.৭ শতাংশ জায়গা বসবাসের উপযোগী। এটি দুটি ভাগে বিভক্ত ক) জংগারিয়ান বেসিন খ) তারিম বেসিন। মূলত ৮০ শতাংশ মানুষ এই তারিম বেসিন এলাকায় বসবাস করে। উরুমকি হলো এই প্রদেশের রাজধানী। এছাড়া কাশগড় নামে আরেকটি শহরও রয়েছে যেটি পূর্বে সিল্ক রুটের অন্যতম বাণিজ্য কেন্দ্র ছিল। অতীতে এই অঞ্চলে উইঘুররা সংখ্যাগরিষ্ট থাকলেও ধীরে ধীরে চীনা হানদের বসবাস এই অঞ্চলে সম্প্রসারিত হতে থাকে। সর্বশেষ জরিপ অনুসারে, ৪৬ শতাংশ উইঘুর ও ৪০ শতাংশ হান জিনজিয়াং-এ বসবাস করে। উইঘুররা তুর্কি বংশোদ্ভূত এবং এখানে আজারবাইজানী ও তুর্কমানদের প্রভাব দেখা যায়। মূল ভূখণ্ড জিনজিয়াং-এ প্রায় ১১ মিলিয়ন উইঘুর বসবাস করে। তারা তাদের নিজস্ব ভাষা উইঘুরে কথা বলে। এছাড়াও তারা মধ্য এশিয়ার দেশ কিরঘিস্তান, কাজাখস্তান, তুর্কমেনিস্তান, তুরস্ক, সিরিয়া, জর্ডান, আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নরওয়ে, সুইডেন প্রভৃতি দেশে বসবাস করে।

ধর্মঃ

দশম শতকে এই অঞ্চলে ইসলামের আবির্ভাব ঘটে এবং ষোড়শ শতাব্দীতে ইসলাম সর্বক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়ে। তাদের ধর্মাচরণে সুফিবাদের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। ইদ খাহ মসজিদ হলো জিনজিয়াং ও চীনের সবচেয়ে বড় মসজিদ। এখানে একত্রে দশ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারে। খুতান মসজিদ ও আফাখ খুজা মসজিদও এই অঞ্চলের বিখ্যাত মসজিদ। এছাড়াও, এখানে প্রাচীন বৌদ্ধ ধর্মের বিভিন্ন নিদর্শনেরও দেখা পাওয়া যায়।

অর্থনীতিঃ

এখানকার মানুষের প্রধান পেশা কৃষি ও বাণিজ্য। হামি তরমুজ নামে একটি ফল এই অঞ্চলে বিখ্যাত। এছাড়াও এখানে তেল ও খনিজ পদার্থের ভান্ডার রয়েছে। সম্প্রতি চীনের সরকার তার দেশের সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক গ্যাসের ক্ষেত্র খুঁজে পেয়েছে এই অঞ্চলে।

রাজনীতিঃ

 কাগজে কলমে জিনজিয়াং স্বায়ত্তশাসিত  হওয়ার কারণে এখানে সরকার রয়েছে। বর্তমানে উইঘুর সরকারের চেয়ারম্যান হচ্ছেন সোহরাত জাকির। যদিও চীনের মূল সরকারের কথার বাহিরে যাওয়ার ক্ষমতা এই সরকারের নেই।

খ্যাতনামা ব্যক্তিবর্গঃ

আকমাদ আলাচ, হালা বাশি (ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব), পেরহাত তুরসুন (কবি), আব্বাস বুরহান (বিজ্ঞানী), নূর বেকরি, সাইফুদ্দিন আজিজ (চীনা রাজনীতিবিদ) দিলরাবা দিলমুরাদ (অভিনেত্রী)।

সূত্রঃ বিবিসি/টাইম.কম

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.