--- বিজ্ঞাপন ---

ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে উঠে এলো বাংলাদেশের আকাশে রহস্যজনক মিথেন বিষাক্ত গ্যাসের কথা

0

কাজী আবুুল মনসুর/ সিরাজুর রহমান ##

কানাডা ভিত্তিক পরিবেশ গবেষণামুলক প্রতিষ্ঠান জিএইচজিস্যাট ইনকর্পোরেশন সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের আকাশে রহস্যজনক গ্রীন হাউস ইফেক্ট মিথেন বিষাক্ত গ্যাসের উপস্থিতির উৎস সনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। মুলত চলতি ২০২১ সালের এপ্রিল মাসের শুরুতে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় বাংলাদেশের আকাশে ঘন মিথেন গ্যাসের রহস্যজনক উপস্থিতির বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। তবে সেই সময়ে এর মূল কারণ এবং উৎস সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তবে অবশেষে বাংলাদেশের আকাশে রহস্যজনক বিষাক্ত মিথেন গ্যাসের উৎসও শনাক্ত করেছে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ পর্যবেক্ষক প্রতিষ্ঠান জিএইচজিস্যাট ইনকরপোরেশন।

জিএইচজিস্যাট ইনকরপোরেশন তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে যে, বাংলাদেশের আকাশে ব্যাপক মাত্রায় বিষাক্ত মিথেন গ্যাস বা শক্তিশালী গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র হয়ে উঠেছে রাজধানী ঢাকার মাতুয়াইলে থাকা বিশাল আকারের ময়লার ভাগাড়। সেখান থেকে প্রতি ঘণ্টায় আনুমানিক চার টনের সমপরিমাণ মিথেন গ্যাস নিঃসরিত হচ্ছে এবং তা বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রার অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।

গত ২৫ এপ্রিল জিএইচজিস্যাট ইনকরপোরেশনের বরাত দিয়ে প্রভাবশালী গণমাধ্যম ব্লুমবার্গে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদটিতে উল্লেখ করা হয়, স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার কোনো এক অংশ থেকে পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধিতে সবচেয়ে ক্ষতিকর ভূমিকা রাখা গ্রিনহাউজ গ্যাসগুলোর মধ্যে অন্যতম মিথেন গ্যাসের বিপুল পরিমাণ নিঃসরণ চিহ্নিত করা হয়েছে। অর্থাৎ রাজধানী ঢাকারই কোনো একটি অংশ থেকে প্রচুর পরিমাণে বিষাক্ত মিথেন গ্যাস উৎপন্ন হচ্ছে।

মিথেন কার্যত একটি বর্ণহীন ও গন্ধহীন গ্যাস। গ্রিনহাউস গ্যাসগুলোর মধ্যে অন্যতম শক্তিশালী গ্যাস মিথেনকে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য দায়ী করা হয়। কারণ পৃথিবীতে আসা সূর্যের তাপ ধরে রাখার মাধ্যমে গ্যাসটি বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। এছাড়া মিথেন এতটাই ক্ষতিকর যে, গত দুই দশকে কার্বন ডাই অক্সাইডের চেয়েও বায়ুমণ্ডলের ৮৪ গুণ বেশি ক্ষতি করেছে মিথেন গ্যাস।

জিএইচজিস্যাট ইনকরপোরেশনের প্রেসিডেন্ট স্টেফানি জার্মেইন জানিয়েছেন, গত ১৭ এপ্রিল তাদের হুগো স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বাংলাদেশের মাতুয়াইল স্যানিটারি ল্যান্ডফিল বা ময়লার ভাগাড় থেকে বিপুল পরিমাণ মিথেন গ্যাস নিঃসরণ হতে দেখা গেছে। প্রতিষ্ঠানটির ধারণা, এর পরিমাণ প্রতি ঘণ্টায় প্রায় চার হাজার কেজি হতে পারে। আরও স্পষ্ট ভাবে বললে, ১,৯০,০০০ গাড়ি প্রতি ঘণ্টায় পৃথিবীর বায়ুকে যতোটা দূষিত করে, ঠিক সেই একই পরিমাণ বিষাক্ত মিথেন গ্যাস ছড়াচ্ছে মাতুয়াইলের এই ময়লার ভাগাড়টি।

অবশ্য জিএইচজিস্যাট ইনকরপোরেশনের প্রশ্নের জবাবে মাতুয়াইল পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত থাকার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়। তার সাথে সমস্যার মাত্রা নির্ধারণের জন্য একটি টেকনিক্যাল কমিটিও গঠন করা হয়েছে বলে জানায় মন্ত্রণালয়টি এবং বিষয়টি সার্বিকভাবে তদন্ত করে দেখার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশের পরিবেশ মন্ত্রণালয়।

এদিকে বাংলাদেশের পরিবেশ মন্ত্রণালয় জানায়, মাতুয়াইল ময়লার ভাগাড় এলাকা থেকে মিথেন গ্যাস নিঃসরণের মাত্রা খতিয়ে দেখা এবং তা কমিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইতোমধ্যেই পরামর্শক নিয়োগ করা হয়েছে। এক মাসের মধ্যে এ বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে তাদের।

ঢাকার মাতুয়াইল ময়লার ভাগাড়টি আসলে ১৮১ একর জমি জুড়ে বিস্তৃত এবং সেখানে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২,৫০০ টনেরও বেশি বর্জ্য ফেলা হয়। এর মধ্যে জাপানের অর্থায়নে তরল বর্জ্য এবং গ্রিনহাউস গ্যাস ব্যবস্থাপনার কাজ করা হলেও সেখান থেকে কী পরিমাণ ক্ষতিকর মিথেন গ্যাস উৎপন্ন হয় সে সম্পর্কে সঠিক কোনো তথ্য নেই বাংলাদেশের পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের কাছে।

বিষয়টি নিয়ে ভারতের গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক রিপোর্টে বিজ্ঞানীদের বরাত দিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মিথেনকে উৎস অঞ্চল থেকে জনবসতিতে ছড়িয়ে দেয় যা উষ্ণায়নের অন্যতম কারণ। এছাড়াও প্রাকৃতিক গ্যাসের লাইনে ফাটল, কলকারখানার বর্জ্য, জ্বালানির ধোঁয়া ইত্যাদি সমস্যাও রয়েছে। বাংলাদেশে বাড়তে থাকা মিথেন নিঃসরণ উদ্বেগ বাড়িয়েছে আন্তর্জাতিক মহলেও। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে কম উচ্চতা ও অধিক জনঘনত্ব এই অঞ্চলকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। Environmental Defense Fund এর চেয়ারম্যান Stiven Humburg এর মতে বাংলাদেশের পরিস্থিতি অবিলম্বে খতিয়ে দেখতে হবে। মিথেন নিঃসরণের উৎসগুলি চিহ্নিত করতে হবে। তা না হলে আগামি দিনগুলো আরও ভয়ঙ্কর হতে চলেছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি।

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.