--- বিজ্ঞাপন ---

উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া কি যুদ্ধে জড়িয়ে যাবে?

0

সিরাজুর রহমান, বিশেষ প্রতিনিধি#

ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসন চলমান থাকা অবস্থায় সাম্প্রতিক সময়ে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে ব্যাপক মাত্রায় সামরিক উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। দেশ দুটির মধ্যে যুদ্ধ শুরু না হলেও সীমান্ত অঞ্চলে উত্তর কোরিয়ার সামরিক বাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতি এবং আগ্রাসী তৎপরতা ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে দক্ষিণ কোরিয়াকে সতর্ক করে বাফার জোনে প্রায় দের শতাধিক রাউন্ড আর্টিলারী প্রজেক্টাইল ফায়ার করেছে কিম জং উনের সেনাবাহিনী।

এদিকে দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনী সর্বোচ্চ সামরিক প্রস্তুতি নিয়ে সীমান্তবর্তী অঞ্চলে অবস্থান নিয়েছে। তাছাড়া দক্ষিণ কোরিয়ার বিমান বাহিনীর এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম এবং যুদ্ধবিমানগুলোকে পূর্ণাঙ্গ অস্ত্র সজ্জিত করে মোতায়েন রাখা হয়েছে। উত্তর কোরিয়ার কিম জং উন সরকার বরাবরই দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে গোপনে আমেরিকার সহায়তায় যুদ্ধ বা উস্কানিমূলক কার্যকলাপের অভিযোগ আনলেও দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারের তরফে তা অস্বীকার করা হয়েছে।

আসলে বিগত কয়েক দশকের মধ্যে উত্তর কোরিয়া এক সাথে এত বিপুল সংখ্যক কমব্যাট এয়ারক্রাফট আকাশে উড্ডয়ন করেনি। উত্তর কোরিয়ার আকাশ যুদ্ধের সক্ষমতা সম্পর্কে জানতে হলে আগে আমাদের দেশটির বিমান বাহিনীতে থাকা যুদ্ধবিমান ও এয়ার কমব্যাট এরিয়াল ফ্লীট নিয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন। বর্তমানে উত্তর কোরিয়ার বিমান বাহিনীতে মোট যুদ্ধবিমান, বোম্বার, হেলিকপ্টার, সামরিক পরিবহন বিমান এবং প্রশিক্ষণ বিমানের মোট সংখ্যা প্রায় ১,৩৫০টি এর কাছাকাছি হতে পারে। তবে বাস্তবে এই এয়ার ফ্লীটের ৭০% পর্যন্ত সোভিয়েত ইউনিয়ন আমলের তৈরি কিংবা সংগ্রহ করা হয়। যদিও উত্তর কোরিয়ার বিমান বাহিনীর এয়ার ফ্লীটে অপারেশন থাকা মোট সংখ্যা যৌক্তিক কারণেই কিছুটা কম বা বেশি হতে পারে। উত্তর কোরিয়ার বিমান বাহিনীতে সর্বোচ্চ রেঞ্জ ও শক্তিশালী মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান হিসেবে মিগ-২৯ জেট ফাইটার রয়েছে ৩৫টি। তাছাড়া পুরনো মিগ-২১ যুদ্ধবিমান ২৬টি, মিগ-২৩ যুদ্ধবিমান রয়েছে ৫৬টি। তাছাড়া সুখোই সিরিজের যুদ্ধবিমান এবং গ্রাউন্ড এ্যাটাক ফ্যাসালিটির এসইউ-২৫ ৩৪টি এবং অতি পুরনো এসইউ-৭ রয়েছে ১৮টি। এদিকে ষাটের দশকের মিগ-১৯ এর চাইনিজ কপি এফ-৬ রয়েছে ৯৭টি, এফ-৭ রয়েছে ১২০টি। সোভিয়েত আমলের মিগ-১৭ এর চাইনিজ কপি এফ-৫ রয়েছে ১০৬টি। তবে সোভিয়েত আমলের তৈরি মিডিয়াম রেঞ্জের ইলুশিন-২৮ অথবা চীনের তৈরি এইচ-৫ সিরিজের পুরনো বোম্বার বিমান রয়েছে প্রায় ৮০টি।

এখানে প্রকাশ থাকে যে, উত্তর কোরিয়ার মতো একেবারে স্বল্প আয়ের একটি দেশ এত বিপুল সংখ্যক কমব্যাট এয়ারক্রাফট এখনো পর্যন্ত কিভাবে আকাশে উড্ডয়ন করানোর মতো প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বজায় রেখেছে তা একটি আশ্চর্যের বিষয় হয়ে থেকেই যাচ্ছে। উত্তর কোরিয়ার এই এয়ার ফ্লীটের একটি বড় অংশ কিনা আবার ষাট ও সত্তরের দশকে সোভিয়েত ইউনিয়ন আমলের তৈরিকৃত বিমান। উত্তর কোরিয়ার বিমান বাহিনী ১৯৭১ সালে মোট ২৮টি এসইউ-৭ যুদ্ধবিমান সার্ভিসে আনে। অথচ সেই ১৯৫৫ সালে প্রথম তৈরি করে এসইউ-৭ এর প্রডাকশন লাইন ১৯৭২ সালেই বন্ধ করে দেয় সোভিয়েত ইউনিয়ন। অথচ উত্তর কোরিয়ার কিন্তু এখনো পর্যন্ত এটিকে নিজস্ব রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং সক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে নিজ বিমান বাহিনীর এয়ার ফ্লীটে অপারেশনাল রেখেছে। বর্তমানে সারা বিশ্বের মধ্যে এসইউ-৭ যুদ্ধবিমানের একমাত্র ব্যবহারকারী দেশ হচ্ছে উত্তর কোরিয়া। এই হলো উত্তর কোরিয়ার প্রকৃত আকাশ সক্ষমতা ও এয়ার কমব্যাট ক্যাপাবিলিটির বাস্তব অবস্থা।

অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়ার বিমান বাহিনীর এয়ার ফ্লীটে থাকা যুদ্ধবিমানের তালিকা দেখলে যে কেউই একেবারে চমকে যেতে পারে পারে। শান্তিপ্রিয় এই দেশটির যুদ্ধবিমানের তালিকায় এফ-১৬ রয়েছে ১৬৭টি, এফ-১৫কে স্টাইক ঈগল ৬০টি এবং অত্যাধুনিক এফ-৩৫এ স্টেলথ জেট ফাইটার রয়েছে ৪০টি। তাছাড়া পুরনো হলেও মিড লাইফ আপগ্রেডিং করা এফ-৪ই ফ্যান্টম যুদ্ধবিমান আছে ২০টি এবং এফ-৫ই/এফ টাইগার যুদ্ধবিমান রয়েছে ৮০টি। আবার নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি নতুন প্রজন্মের কেএফ-২১ সিরিজের এডভান্স জেট ফাইটার অর্ডার দিয়ে রেখেছে ১২০টি। দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং কোম্পানি কিন্তু নিজেই আবার কিনা আমেরিকার লাইসেন্স নিয়ে এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকন যুদ্ধবিমান ম্যানুফ্যাকচারিং করে।

এ থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার বিমান বাহিনীর এয়ার ফ্লীট ও কমব্যাট সক্ষমতা ঠিক কোন পর্যায়ে রয়েছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আর এই সক্ষমতার এয়ার ফ্লীটটি ইউক্রেনের থাকলে আজ উল্টো হয়ত রাশিয়াকে পেদানী দিয়ে অনেক আগেই সীমানা ছাড়া করত। এখানে খেয়াল করার মতো একটি বিষয় হলো যে, সামরিক দিক দিয়ে প্রকৃত সক্ষমতা সম্পন্ন দেশগুলোর পেছনে লাগেনা বা সুপার পাওয়ার মোড়লেরা সরাসরি যুদ্ধ করতে চায় না। সামরিক দিক দিয়ে দূর্বলতা পেলেই কেবল বিভিন্ন অযুহাতে নিজের স্বার্থ হাসিলে কৌশলগত কারণে গুরুত্বপূর্ণ অপেক্ষাকৃত দূর্বল দেশের উপর সামরিক আগ্রাসন চালানো কিংবা অযৌক্তিক হস্তক্ষেপ করার সাহস দেখায় সুপার পাওয়ার দেশগুলো।#

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.