--- বিজ্ঞাপন ---

উত্তর কোরিয়ার অস্ত্র ভান্ডারে প্রাণঘাতি ক্যামিকেল ও বায়োলজিক্যাল অস্ত্র

0

সিরাজুর রহমান, বিশেষ প্রতিনিধি##

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত মিডিয়ায় প্রচার করা হয় যে, উত্তর কোরিয়ার অস্ত্র ভান্ডারে অর্ধ শতাধিক নিউক্লিয়ার অস্ত্রসহ উচ্চ প্রযুক্তির অতি ভয়ঙ্করতম ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক পালস এবং প্রাণঘাতী ক্যামিক্যাল ও বায়োলজিক্যাল ওয়েপনসের বিশাল মজুত রয়েছে। যার আক্রমনে নাকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৯০ শতাংশ মানুষের নিশ্চিত মৃত্যু ঘটতে পারে। আবার এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে একচ্ছত্র  অস্ত্র বানিজ্য চলমান রাখতে উত্তর কোরিয়াকে অতি মাত্রায় শক্তিশালী হিসেবে প্রচারে চেষ্টার কোন ত্রুটি করেনি আমেরিকা।

অনেকে মনে করেন, উত্তর কোরিয়া মুলত নিজেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আক্রমনের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে এবং নিজের সামরিক সক্ষমতা অতিরঞ্জিত আকারে প্রকাশ করতে এসব ইলেক্ট্র ম্যাগনেটিভ পালস, বায়োলজিক্যাল ওয়েপন্স, থার্মোনিউক্লিয়ার ওয়ারহেড ইত্যাদি অস্ত্রের বিশাল মজুত থাকার বিষয়ে ব্যাপক অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। তার পাশাপাশি এটাও ঠিক যে, উত্তর কোরিয়ার অস্ত্র ভান্ডারে হাজার হাজার ব্যালেস্টিক মিসাইলের মজুত রয়েছে।

খেয়াল করার মতো একটি বিষয় হলো, উত্তর কোরিয়ার সামরিক সক্ষমতার ইস্যুটি অনেকাংশ ১৯৯১ সালের ইরাক যুদ্ধের সাদ্দাম বাহিনীর মত সাদৃশ্যপূর্ণ। যুদ্ধের শুরুতে বিশ্ববাসী জানল যে ইরাকের সাদ্দাম বাহিনীর হাতে হাজার হাজার টন রাসায়নিক এবং বায়োলজিক্যাল অস্ত্র মজুত রয়েছে। কিন্তু যুদ্ধ শেষে দেখা গেল, বিশ্ব মিডিয়ায় এসব প্রচারিত তথ্য সম্পূর্ণ ভুয়া এবং একেবারেই ভিত্তিহীন। আর পার্সিয়ান গাল্ফ যুদ্ধে সাদ্দাম বাহিনীর পরাজয় বরণ করতে ৯০ দিনের বেশি সময় লাগেনি।

ইরাকের সামরিক আগ্রাসন প্রতিরোধ যুদ্ধ অতি সংক্ষিপ্ত সময়ের হলেও এর প্রভাব ছিল অত্যন্ত ভয়াবহ ও সুদূরপ্রসারী। এ যুদ্ধের হাত ধরেই কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্থায়ীভাবে মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক ঘাটি গেড়ে বসার এবং প্রভাব বিস্তারে একচেটিয়া সুযোগ পেয়ে যায়। যার মূল সুবিধাভোগী ছিল আমেরিকা ও তার পশ্চিমা বিশ্ব। যার বিরুপ প্রভাব কিনা এখনো পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যেকে বয়ে নিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। যুদ্ধ বিগ্রহ থেকে এখনো পর্যন্ত মুক্তি পায়নি মধ্যপ্রাচ্য। তাছাড়া বর্তমানে বৈশ্বিক অস্ত্র রপ্তানির প্রায় ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত সরাসরি চলে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের বাদশা আমির শাসিত আরব দেশগুলোতে।

উত্তর কোরিয়ার কীম বাহিনীর কাছে স্বল্প মাত্রার ৮-১০ কিলোটন ক্ষমতা সম্পন্ন সর্বোচ্চ ৩০টি নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড থাকতে পারে বা তার কমও থাকতে পারে। যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো বিশ্বের এক নম্বর সুপার পাওয়ার এর জন্য মোটেও গুরুতর হুমকী হবে বলে মনে করা হচ্ছে না।  সত্যিকার অর্থে যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার সামরিক জোটের সাথে উত্তর কোরিয়ার সামিরিক সংঘর্ষ বেধেই যায়, সেক্ষেত্রে প্রথম ৭২ ঘন্টার মধ্যেই মার্কিন জোট কমপক্ষে ২০ লক্ষ টন বোমা উত্তর কোরিয়ার উপর নিক্ষেপ করে বসতে পারে।

যে কোন অজুহাতে আমেরিকার সামরিক আগ্রাসন উত্তর কোরিয়ার কীম বাহিনীর পক্ষে হজম করাটা যে খুবই কঠিন হয়ে উঠবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাছাড়া এই ভয়াবহ যুদ্ধের কিছুদিনের মধ্যেই কোরিয়ান পেনিন্সুলা এলাকায় কমপক্ষে এক কোটি লোক মৃত্যুর মুখে পতিত হবার সমুহ সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। তার সাথে পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যেতে পারে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ একটি দেশ দক্ষিণ কোরিয়া।

এখানে অবশ্য চিন একটি গুরুত্ববাহী ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করলেও, কোরীয় যুদ্ধে চিন নিজেকে সরাসরি উত্তর কোরিয়ার পক্ষে জড়িয়ে ফেলবে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ থেকে যাচ্ছে। একদিকে চিন নিজেকে প্রায় ৪ দশক ধরে সরাসরি যে কোন যুদ্ধে জড়ানো থেকে দূরে রেখেছে। তাই হঠাৎ করে উত্তর কোরিয়াকে ঘিরে যুদ্ধের জড়িয়ে পড়ার তেমন কোন সম্ভবনা আছে বলে মনে হয় না।

বর্তমানে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে উত্তর কোরিয়া নিয়ে ব্যাপক সামরিক উত্তেজনা বিরাজ করলেও যুদ্ধ শুরু হওয়ার মতো কোন সম্ভবনা নেই। তবে উত্তর কোরিয়া নিয়ে আমেরিকার যে মূল উদ্দেশ্য তা কিন্তু শতভাগ সফল হয়েছে । বিশেষ করে উত্তর কোরিয়ার ফাঁকা সামরিক হুমকিকে কাজে লাগিয়ে আমেরিকার অস্ত্র বানিজ্য প্রায় শত বিলিয়ন ডলারের সীমাকে অনেক আগেই ছাপিয়ে গেছে। আর চীন ও উত্তর কোরিয়ার সামরিক হুমকি ও উত্তেজনা অনেকটাই ভিত্তিহীন হলেও এর বিপরীতে আমেরিকার এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে আমেরিকার অতি লাভজনক অস্ত্র বানিজ্য আগামী ২১০০ সালের আগে বন্ধ হবে বলে মনে হয় না।#

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.